বিড়াল কেন শসা দেখলে ভয় পায়?
বিড়াল পোষা মানেই মিষ্টি মুহূর্ত আর কিছু মজার ধাঁধার সম্মুখীন হওয়া। এমন একটি ধাঁধা— বিড়াল কেন সাধারণ একটি শসাকে এত ভয় পায়? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিড়াল ও শসার অনেক ভিডিও ভাইরাল হলেও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মজা করা মোটেও উচিত নয়। তবে এই ভয়ের রহস্য কী?
আমাদের পোষা বিড়ালরা জন্মগতভাবে একাকী শিকারী প্রাণী। দলবদ্ধভাবে থাকার সুবিধা তাদের নেই, তাই তাদের সবসময় নিজের সুরক্ষার জন্য সতর্ক থাকতে হয়। এই কারণে তারা আশেপাশের সামান্য পরিবর্তনেও অতিসতর্ক থাকে এবং মুহূর্তের মধ্যে পালানোর বা লড়াই করার প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই আচরণের ফলেই হঠাৎ চমকে ওঠা বা ভয় পাওয়ার মতো ঘটনা তাদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে।
শসা ভয়ের কারণ কী?
বিড়াল কেন শসাকে দেখে লাফিয়ে ওঠে, তার পেছনে দুটি প্রধান ব্যাখ্যা আছে—
১. শসা দেখতে সাপের মতো!
বিড়ালরা শসাকে ভয় পায় তার প্রধান কারণ হলো— বিবর্তনের ধারায় এটি তাদের কাছে সাপ কিংবা সরীসৃপ শিকারী প্রাণীর মতো মনে হতে পারে। হঠাৎ করে চোখের সামনে সবুজ ও লম্বা একটি বস্তু দেখলে তাদের মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিপদের সংকেত তৈরি হয়। হাজার হাজার বছর ধরে বন্য পরিবেশে সাপ থেকে বাঁচার যে সহজাত প্রবৃত্তি, তা তাদের দ্রুত লাফিয়ে সরে যেতে বাধ্য করে।
২. হঠাৎ অপ্রত্যাশিত আগমন
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন— বিড়াল শসাকে ঘৃণা করে না, তাদের প্রতিক্রিয়াটি শসার জন্য নয় বরং বস্তুটির অপ্রত্যাশিত আগমনের কারণে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বিড়াল যখন খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়, তখন মালিকরা তাদের অজান্তেই দ্রুত শসাটি পিছনে রেখে দেন। হঠাৎ কোনো বস্তু পিছনে আবির্ভূত হলে বিড়ালসহ যে কোনো প্রাণীই চমকে ওঠে ও ভয় পেয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে, শসাটি কেবল একটি বিস্ময়কর উপাদান হিসেবে কাজ করে।
সম্ভবত সাপের মতো দেখতে হওয়ার ধারণা ও অপ্রত্যাশিতভাবে তার আগমন— এই দুটির মিশ্রণেই বিড়াল এমন নাটকীয় প্রতিক্রিয়া দেখায়।
বিড়ালকে শসা দিয়ে ভয় দেখানো উচিত নয় কেন?
আপনার বিড়ালকে অবাক করা বা চমকে দেওয়া আপনার কাছে মজাদার মনে হতে পারে, কিন্তু এটি তাদের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এই ধরনের আচরণ তাদের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আস্থা ও বন্ধন ক্ষুণ্ন : বিড়ালরা তাদের মালিকের প্রতি ভয় বা অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে, যা আপনার এবং পোষা প্রাণীটির মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বন্ধনকে নষ্ট করে দেবে।
স্বাস্থ্যের ঝুঁকি : অতিরিক্ত চাপ বা উদ্বেগগ্রস্ত বিড়ালদের মূত্রনালীর রোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মানসিক চাপ : উদ্বেগ একটি গুরুতর অবস্থা যা পোষা প্রাণীকেও প্রভাবিত করে। তাই শসা দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে বিড়ালকে ভয় দেখিয়ে সেই উদ্বেগ বাড়ানো উচিত নয়।
সুতরাং, আপনার পশমী বন্ধুটির মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, বিড়াল ও শসা নিয়ে এমন ‘মজা’ করা থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বিড়ালের সাধারণ সতর্কতা সহজেই উদ্বেগে পরিণত হতে পারে। যদি আপনার বিড়ালের ক্ষুধা, মেজাজ বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে, তবে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাদের শান্ত থাকার জন্য নিরাপদ স্থান নিশ্চিত করা জরুরি।

ফিচার ডেস্ক