হাসপাতালের বিল মেটাতে নবজাতককে ‘বিক্রি’
পাকিস্তানের করাচিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার বিল মেটাতে এক নারীর তার নবজাতককে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২ নভেম্বর) মেমন গোথ এলাকার একটি হাসপাতালের এই ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় মালির জেলা পুলিশপ্রধান বলেছেন, শিশুটিকে ইতোমধ্যে নিরাপদে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, একইসঙ্গে ওই হাসপাতালটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা গ্রহণ করেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এজাজ। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম। মামলাটি আরও তদন্তের জন্য অ্যান্টি-ভায়োলেন্ট ক্রাইম সেলের (এভিসিসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশুটিকে কিনে নেওয়া নারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
ঘটনাটি করাচির মেমন গোথের জেহরা ক্লিনিকে ঘটে। নবজাতকের বাবা জামশোরোর নূরিয়াবাদের জোখিও গোথের বাসিন্দা সারুংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরটি নথিভুক্ত করা হয়।
পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩৬৩ (অপহরণ) এবং ২০১৮ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ আইনের ধারা ৩, ৪ ও ৫ ধারায় এফআইআরে অভিযোগ করা হয়।
পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগে নবজাতকের বাবা সারুং জানান, তার গর্ভবতী স্ত্রী পারিবারিক কলহের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। গত ৫ অক্টোবর প্রসূতি ওই নারী তার মায়ের সঙ্গে মেডিকেল চেক-আপের জন্য জেহরা ক্লিনিকে যান। সেখানে ডা. জেহরা তার কাছে সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শ দেন এবং অগ্রিম টাকা দাবি করেন। ওই প্রসূতির পরিবার যখন জানায়, তাদের খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই, তখন ডাক্তার জানান, তিনি এমন একজন নারীকে চেনেন যিনি দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাহায্য করেন এবং খরচ বহন করতে পারেন। ডাক্তার দাবি করেন, ওই নারী দরিদ্রদের সন্তান লালন-পালনও করেন। নবজাতকের জন্ম হওয়ার পর শামা নামের এক নারী হাসপাতালে আসেন, বিল পরিশোধ করেন এবং নবজাতককে তার সঙ্গে করে নিয়ে যান।
কয়েকদিন পর বাবা সারুং জানতে পারেন, তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং শিশুটিকে শামা তুলে নিয়ে গেছে। তিনি যখন ক্লিনিকে যান, তখন কর্মীরা শামার ফোন নম্বর দেন। তখন থেকে এটি বন্ধ রয়েছে।
সারুং পুলিশকে জনান, শামা হয়তো অন্য কোনো পক্ষের কাছে শিশুটিকে বিক্রি করে দিয়েছেন। সে কোনো নেটওয়ার্কের অংশ, যারা দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের নবজাতকের বিনিময়ে আর্থিক সহায়তা দেয়।
মেমন গোথের সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাভেদ আরও বলেন, পুলিশ জেহরা ক্লিনিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে, যাতে নিশ্চিত হতে পারে, অতীতে সেখানে একই রকম ঘটনা ঘটেছে কিনা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মালির এসএসপি আব্দুল খালিক পীরজাদা সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, নবজাতককে পাঞ্জাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার পুলিশ অভিযানের মাধ্যমে তাকে সফলভাবে উদ্ধার করেছে।
‘যে ক্লিনিকে শিশুটির জন্ম হয়েছিল, সেটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা আর্থিক সাহায্যের কথা বলে শিশুটিকে বিক্রি করে দিয়েছিল। নবজাতকটি এখন তার আসল বাবা-মায়ের কাছে রয়েছে’, বলেন এসএসপি আব্দুল খালিক পীরজাদা।
এসএসপি আব্দুল খালিক পীরজাদা আরও বলেন, সন্দেহভাজন ডা. জেহরা ও শামা বালোচ এখনও পলাতক। তবে তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং শিগগিরই তারা গ্রেপ্তার হবে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক