ব্রাজিলে টর্নেডোর তাণ্ডবে নিহত ৬, আহত ৭৫০
দক্ষিণ ব্রাজিলের পারানা রাজ্যের রিও বোনিতো দো ইগুয়াকু শহরে শনিবার (৮ নভেম্বর) ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত ও প্রায় ৭৫০ জন আহত হয়েছেন। ১৪ হাজার অধিবাসীর এই শহরটির বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খবর এএফপির।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টর্নেডোটি মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও এর প্রভাব ছিল মারাত্মক। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) বেগে প্রচণ্ড বাতাস বইছিল।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এই টর্নেডোর আঘাতে গাড়িগুলো খেলনার মতো উল্টে যায় এবং বহু ভবন ধসে পড়ে। আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, শহরটি মূলত ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।
আরও পড়ুন : ব্রাজিলের মডেলের ছবি জালিয়াতি করে ভারতে ২২ বার ‘ভোট’
পারানা রাজ্য সরকার নিশ্চিত করেছে, টর্নেডোতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপক ও চিকিৎসা কর্মীরা ৭৫০ জন আহতকে চিকিৎসা দিয়েছেন, যার মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর। একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পারানা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার প্রধান ফার্নান্দো শুনিগ সংবাদমাধ্যম জি-১ কে বলেন, এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র। ঘূর্ণিঝড়টি শহরের কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানার কারণে আরও বেশি প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরটির ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টর্নেডোর সময় শহরের বাইরে কাজ করছিলেন নেরু সাবাদিনি (৫১)। তিনি এএফপিকে বলেন, আমি বাড়িতে পৌঁছে নিজেকে মাথার ওপর ছাদ ছাড়াই দেখতে পেলাম। আমি এখন গৃহহীন ও সবকিছু পুনর্নির্মাণ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন : মরিচের গুঁড়া ছুড়ে ২০ সেকেন্ডে খেলেন ১৭ চড়
রোজেলি ডালক্যান্ডন নামের একজন নারী তার দোকান হিসেবে ব্যবহৃত ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, এটি সবকিছু ধ্বংস করেছে। শহর, ঘরবাড়ি, স্কুল ধ্বংস করেছে। আমাদের কী হবে?
উদ্ধারকারী দলগুলো ধ্বংসস্তূপের স্তূপের মধ্যে জীবিত বা মৃতদেহের সন্ধানে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কাছের একটি শহরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ‘সংহতি’ প্রকাশ করে মন্ত্রী ও দুর্যোগ ত্রাণ বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে শহরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের মতে, পারানার পাশাপাশি সান্তা ক্যাটারিনা ও রিও গ্র্যান্ডে দো সুলের জন্য বিপজ্জনক ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পারানা ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর অন্যান্য শহরও তীব্র বাতাস, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়েছিল।
আরও পড়ুন : ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণহানির পর ভিয়েতনামে ঘূর্ণিঝড় কালমেগির আঘাত
উল্লেখ্য, গত বছরও দক্ষিণ ব্রাজিল ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল, যার ফলে রিও গ্র্যান্ডে দো সুল রাজ্যে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ২০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে ভূমিকা পালন করছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক