বেলজিয়ামের নিরাপত্তায় সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার সন্দেহভাজন ড্রোন অনুপ্রবেশের পর বেলজিয়ামের আকাশসীমা রক্ষায় সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্যের সেনা সদস্য ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।
আজ রোববার (৯ নভেম্বর) বিবিসি’র ‘সানডে উইথ লরা কুন্সবার্গ’ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সেনাপ্রধান স্যার রিচার্ড নাইটন জানান, বেলজিয়ামের সেনাপ্রধান চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে এ সহায়তা চান এবং ইতোমধ্যে সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল বেলজিয়ামের পথে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে ব্রাসেলসের প্রধান বিমানবন্দর জ্যাভানটেমের কাছাকাছি ড্রোন দেখা যাওয়ায় বিমানবন্দরটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়। একইভাবে অন্যান্য স্থানে, এমনকি একটি সামরিক ঘাঁটির কাছেও ড্রোনের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
স্যার নাইটন বলেন, এই অনুপ্রবেশ রাশিয়া করেছে কি না, তা নিশ্চিত নয়, তবে ‘এটি মস্কোর নির্দেশে হয়েছে বলে ধারণা করা যৌক্তিক।’ তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলির সঙ্গে সমন্বয় করেই বেলজিয়ামকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্যার নাইটন বলেন, ‘আমরা ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে মিলে বেলজিয়ামকে সহায়তা করছি — আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ও সক্ষমতা ইতোমধ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে।’
এর আগে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছিল, ব্রাসেলসের অনুরোধে তারা অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থা নিয়ে সহায়তা দেবে।
ড্রোনের কারণে ব্রাসেলস এয়ারলাইন্সের প্রায় তিন হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, বহু ফ্লাইট বাতিল বা ঘুরিয়ে দেওয়ায় তাদের ‘বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস এবং বেলজিয়ামের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করছে, তবে বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন স্বীকার করেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।’
থিও ফ্রাঙ্কেন বলেন, ‘প্রথমে যখন আমাদের সামরিক ঘাঁটির ওপর ড্রোন উড়তে দেখা যায়, আমরা মনে করেছিলাম এটি শুধু আমাদের সমস্যা। কিন্তু এখন এটি এমন এক হুমকি, যা ইউরোপের বেসামরিক অবকাঠামোকেও প্রভাবিত করছে।’
সার রিচার্ড নাইটন বলেন, ইউরোপের জন্য রাশিয়াই এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে অবৈধ আগ্রাসন রাশিয়ার যুদ্ধের বর্বরতা প্রকাশ করেছে।’
নাইটন আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যে রুশ গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক কর্মকৌশল (হাইব্রিড যুদ্ধ) এখন বাস্তব হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
বিরোধী দলের ছায়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে হুমকির মাত্রা বেড়েছে, আর ন্যাটোর সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে কাজ করাই এখন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।’
তবে তিনি সরকারের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির গতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, ‘বেশি জরুরিতার সঙ্গে কাজ করা উচিত।’
চলতি বছরের বসন্তে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দেয়, ২০২৭ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে এবং পরবর্তী সংসদে তা ৩ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্যার রিচার্ড বলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে এতো বড় বাজেট বরাদ্দ আমি কখনো দেখিনি।’
সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে (সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্কে) ড্রোন দেখা যাওয়ার ঘটনাও বড় আকারের ফ্লাইট বিঘ্নের কারণ হয়েছে।
যদিও অনেক কর্মকর্তা রাশিয়ার ‘হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল’কে দায়ী করছেন, ক্রেমলিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জার্মান মন্ত্রী পিস্টোরিয়াস ইঙ্গিত দিয়েছেন, এসব ড্রোন কার্যক্রমের পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই আলোচনা থাকতে পারে, যেখানে জব্দ রুশ সম্পদ থেকে ১৪০ বিলিয়ন ইউরোর ঋণ সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যদিও রাশিয়ার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পূর্ব ইউরোপে রুশ যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা সন্দেহকে আরও জোরদার করেছে।
এরই মধ্যে পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রুশ অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় যৌথভাবে প্রতিরক্ষা জোরদারের অংশ হিসেবে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিরক্ষা মিশনে যুক্তরাজ্য আরএএফ টাইফুন যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক