পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন, বাড়ছে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিলের খসড়া অনুমোদন করেছে। এই বিল পাস হলে পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সিনেট এবং জাতীয় পরিষদের আইন ও ন্যায়বিচার বিষয়ক কমিটি আলোচনার মাধ্যমে বিলটি অনুমোদন করে। বৈঠক শেষে সিনেটর ফারুক এইচ নায়েক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। খবর ডনের।
ফারুক এইচ নায়েক বলেন, বিলের কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনার জন্য তাকে এবং আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সেই নির্দিষ্ট ধারাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। পাশে থাকা আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার জানান, কমিটির চূড়ান্ত করা প্রস্তাবগুলোর ওপর একটি প্রতিবেদন আজ (সোমবার) সিনেটে জমা দেবেন।
এই বিলটি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদনের পরপরই দ্রুত পার্লামেন্টে তোলা হয়েছিল।
এই সংশোধনীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে। বিলটিতে বর্তমানে থাকা ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’ (সিজেসিএসসি) পদটি বাদ দিয়ে নতুন পদ ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ (সিডিএফ) তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে যিনি এখন সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিই নতুন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বা সিডিএফ হবেন। এর মানে হলো, তিনি একইসঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী—সবগুলো সামরিক শাখার প্রধান হয়ে যাবেন। ফলে তার হাতে দেশের সামরিক বিভাগের সর্বোচ্চ ক্ষমতা চলে আসবে।
দীর্ঘ চার দশক ধরে সিজেসিএসসি পদটি সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে শুধু সমন্বয় করার কাজ করত, যা ছিল অনেকটা প্রতীকী। কিন্তু নতুন বিল পাস হলে চলতি বছরের ২৭ নভেম্বরের মধ্যেই এই পদটি বিলুপ্ত হবে।
এই বিলের সমালোচকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন দেশের ক্ষমতা কাঠামোতে ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং সামরিক বাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেবে। তারা বলছেন, এই সংশোধনী কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে আনা হয়েছে, দেশকে শক্তিশালী করতে নয়।
সামরিক কাঠামো ছাড়াও এই বিলে নতুন একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াতেও কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। তবে বিরোধীরা এই বিল তাড়াহুড়ো করে পাস করার উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
পিটিআই, জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) ও মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমন (এমডব্লিউএম) দলের সদস্যরা রোববারের সংসদীয় কমিটির বৈঠক বয়কট করেন।
তবে আইনমন্ত্রী তারার বিরোধী দলগুলোকে বয়কট না করে গঠনমূলকভাবে প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনা ও ঐকমত্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক