ফের ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন, ফিলিপাইনে সরানো হলো ১০ লাখ মানুষ
আবারও ভয়াবহ ঝড়ের মুখোমুখি ফিলিপাইন। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ফাং-ওয়াং। এরই মধ্যে টাইফুনের আঘাতের আশঙ্কায় প্রায় ৯ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগেই ‘কালমেগি’ টাইফুনের তাণ্ডবে ২০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
আজ রোববার (৯ নভেম্বর) দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশে আঘাত হানা শুরু করেছে ফাং-ওয়াং। ঝড়টি স্থলে ওঠার আগেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক এলাকায়। খবর আল জাজিরার।
দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে ‘উওয়ান’ নামে পরিচিত ফাং-ওয়াং রোববার রাতেই অরোরা প্রদেশে আঘাত হানতে পারে। তখন এর বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার এবং ঝোড়ো হাওয়া ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা ৫ নম্বর সিগন্যাল জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাতানডুয়ানেস, কামারিনেস সুর ও অরোরা প্রদেশ। রাজধানী ম্যানিলা ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে ৩ নম্বর সিগন্যাল জারি রয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফাং-ওয়াং-এর বাতাস ও বৃষ্টির ব্যাস এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপদেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা ঢেকে ফেলতে পারে। এর আগে টাইফুন কালমেগি মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে অন্তত ২২৪ জনকে হত্যা করে, পরে তা ভিয়েতনামে প্রবেশ করে আরও ৫ জনের প্রাণহানি ঘটায়।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র কালমেগির ধ্বংসযজ্ঞ ও ফাং-ওয়াং-এর সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিলবার্ট তেওদোরো জুনিয়র জনগণকে আগাম সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই মানুষ আগেই নিরাপদে আশ্রয় নিক, যাতে ঝড় শুরু হওয়ার পর বিপজ্জনক উদ্ধার তৎপরতার প্রয়োজন না হয়।
গিলবার্ট সতর্ক করে বলেন, ফাং-ওয়াং দেশটির বিশাল অংশে প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সেবু প্রদেশ ও রাজধানী ম্যানিলা। দেশজুড়ে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ এই ঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে অফিস অব সিভিল ডিফেন্স।
উত্তরাঞ্চলের ইসাবেলা প্রদেশে বহু মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ক্রিস্টোফার সানচেজ বলেন, প্রতিবার ঝড় এলে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসি। আমাদের বাড়ি নদীর পাশে, আগের ঝড়ে পানির উচ্চতা মানুষের চেয়েও ওপরে উঠেছিল। আমরা ভয় পাচ্ছি।
সোমবার ও মঙ্গলবার (১০-১১ নভেম্বর) দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক প্রদেশে স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৩২৫টি অভ্যন্তরীণ ও ৬১টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং ১০৯টি সমুদ্রবন্দরে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ জন যাত্রী ও কর্মী আটকা পড়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, উপকূলীয় ২০টিরও বেশি প্রদেশে ৩ মিটার (১০ ফুট) পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যার মধ্যে ম্যানিলা মহানগরও রয়েছে।
প্রতি বছর ফিলিপাইন প্রায় ২০টি টাইফুন ও ঝড়ের আঘাত সহ্য করে। এর পাশাপাশি ভূমিকম্প ও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উপস্থিতিতে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক