৭ দিন আগেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে কুনো ব্যাঙ
এখনও পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী বা আবিষ্কৃত কোনো যন্ত্র ভূমিকম্পের পূর্বাভাস না দিতে পারলেও কুনো ব্যাঙ কিন্তু ঠিকই টের পেয়ে যায় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত। তাও আবার একদিন বা দুই দিন নয়। কমপক্ষে সপ্তাহ খানিক আগে তারা জেনে যায় সেই তথ্য! বিষয়টি আশ্চর্য মনে হলেও, ইতালিতে পরিচালিত এক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে।
ঘরের পাশের কুনো ব্যাঙকে আমরা প্রায়শই অবহেলা করি। হয়তো আপনার জানা নেই বিজ্ঞানীরা ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে, মাথা চুলকিয়ে কিংবা ঘন্টার পর ঘন্টা ল্যাবরেটরিতে বসে যে বিষয়টি আবিষ্কার করতে পারেননি, প্রকৃতি কুনো ব্যাঙ’কে সে ক্ষমতা দিয়েছে৷
ভূমিকম্প, যার কারণে প্রতি বছর শত শত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদহানি হচ্ছে।
বিষয়টি কিন্তু সত্য। আর তা না হলে ভূমিকম্পের পাঁচ দিন আগে নিজের ঘর ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয় নেয় কেন তারা! তাহলে চলুন পুরো ঘটনা খুলে বলার আগে কুনো ব্যাঙ সম্পর্কে জেনে নিই কিছু তথ্য।
কুনোব্যাঙ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। অর্থাৎ বাহ্যিক তাপমাত্রার সঙ্গে এদের দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। তাই শীতকালে রক্ত জমাট বাঁধার হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যাঙ মাটির গর্তে, ঘরের কোণে, মালপত্রের স্তূপের নিচে, গাছের কোটরে নিশ্চলভাবে পড়ে থাকে। এ সময় এরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। দেহের সঞ্চিত স্নেহপদার্থ এদের শক্তি জোগায়। কুনোব্যাঙের এই শীতকালীন নিষ্ক্রিয়তাকে বলে শীতনিদ্রা বা হাইবারনেশন। ব্যাঙ উভচর শ্রেণীর মেরুদণ্ডী প্রাণী। কুনো ব্যাঙ ও সোনা বা কোলা ব্যাঙের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। কুনো ব্যাঙ শুকনো জায়গায় বেশি থাকে আর কোলা ব্যাঙ আর্দ্র জায়গায় বা পানিতে বেশি থাকে বলেই জানা যায়।
যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্টের প্রিয় বিষয় ব্যাঙ। আর এই ব্যাঙকে নিয়েই চলছিল তার নিয়মিত গবেষণা। এবারে অবশ্য তার দেখবার বিষয় ভূমিকম্পে কি ধরণের আচরণ করে প্রাণীকুল। বিশেষ করে ব্যাঙ। এর আগে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের ঠিক আগে আগে মাছেরা পানির মধ্যে ছোটাছুটি করতে থাকে, সাপেরা কুঁকড়ে যায় গর্তের মধ্যে। কিন্তু ব্যাঙ কি করে?
ইটালিতে একটি লেকের পাড়ে গবেষণার জন্য ঘাঁটি গাড়লেন প্রফেসর গ্রান্ট। এই এলাকাতে মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। গবেষক হয়তো বেশ সফল। কারণ তাঁর এই গবেষণার ২৯ দিনের মাথায় ইটালিতে হলো ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প। এর আগে গবেষক বেশ কিছু কুনো ব্যাঙের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিশেষ সংকেত যুক্ত যন্ত্র। ভূমিকম্পটি হয় ৬ এপ্রিল। এর ৬-৭ দিন আগে থেকে আজব আচরণ শুরু করে গবেষকের ব্যাঙগুলো৷ পাঁচ দিনের মাথায় নিজেদের আবাস ছাড়তে শুরু করলো তারা। এরপর তিনদিনের মাথায় গবেষণাস্থল সান রুফফিনো লেকের কুনো ব্যাঙ চলে গেলো অন্য কোন জায়গায়। কেবল যে সাধারণ কুনো ব্যাঙগুলোই ঘর ছাড়লো তাই নয়, পোয়াতি ব্যাঙগুলোও ছাড়লো ঘর। বিষয়টি ভাবিয়ে তুললো এই গবেষককে। এই ঘটনার তিন দিন পরেই হলো ভয়াবহ ভূমিকম্প। আবরুৎসো অঞ্চলে লাকিলা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের মারা যায় শতাধিক মানুষ।
গবেষক গ্রান্ট জানালেন, ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে এ ধরণের আচরণ করে না কুনো ব্যাঙগুলো, যায় না ঘর ছেড়ে। কি এক বিশেষ সেন্সর রয়েছে কুনো ব্যাঙের। প্রকৃতি তাকে দিয়েছে আশ্চর্য এই ক্ষমতা। তিনি জানালেন, তার গবেষণাস্থলে চিহ্নিত ব্যাঙগুলো আবার ফিরে এসেছিল। সেটা ভূমিকম্পের আরও ছয় থেকে সাত দিন পর। আর এই কয়েকদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি ছোটখাট ভূমিকম্প হয়েছে সেই এলাকায়। এখন তাঁরা গবেষণা চালিয়ে দেখতে চান, ঠিক কী করে কুনো ব্যাঙ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বুঝতে পারে।

ডয়চে ভেলে