জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে বিশ্বজুড়ে ২৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ও সংঘাতের কারণে গত এক দশকে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। আজ সোমবার (৯ নভেম্বর) ব্রাজিলে জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০) উদ্বোধনের দিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।
‘নো এস্কেপ ২ : দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শিরোনামের প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, গত ১০ বছরে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, চরম আবহাওয়া লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা ধ্বংস করছে। অনেকেই ইতোমধ্যেই সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এখন আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা দ্বিতীয়বার বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সুদান ও ব্রাজিলে বন্যা, কেনিয়া ও পাকিস্তানে রেকর্ড তাপদাহ, চাদ ও ইথিওপিয়ায় পানির সংকট—সবই জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের উদাহরণ।
২০৪০ সালের মধ্যে জলবায়ুজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৬৫-এ পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এই দেশগুলোতেই বর্তমানে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রায় ৪৫ শতাংশ বসবাস করছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আফ্রিকার গাম্বিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সেনেগাল ও মালির শরণার্থী শিবিরগুলোতে বছরে প্রায় ২০০ দিন পর্যন্ত বিপজ্জনক তাপমাত্রার সম্মুখীন হতে হবে।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে, কিন্তু এটি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।
ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, তহবিল সংকটের কারণে আমরা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না। জলবায়ু অর্থায়নকে অবশ্যই সেই সম্প্রদায়গুলোর কাছে পৌঁছাতে হবে, যারা ইতোমধ্যেই টিকে থাকার লড়াইয়ে রয়েছে। এই কপ সম্মেলনে প্রকৃত পদক্ষেপ দরকার, ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়।
অ্যামাজনের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত কপ৩০ সম্মেলনে প্রায় ৫০ হাজার অংশগ্রহণকারী ও ১৯০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি একত্র হয়েছেন।
সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম)—একটি নীতিমালা যা আমদানিকৃত উচ্চ-কার্বন পণ্য যেমন স্টিল ও সিমেন্টের ওপর অতিরিক্ত অর্থ আরোপের প্রস্তাব দেয়।
ইইউ বলছে, এটি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক দেশ একে ‘বাণিজ্য সুরক্ষাবাদী নীতি’ হিসেবে দেখছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোগ—এই নীতিমালা জলবায়ু মোকাবিলার আর্থিক বোঝা তাদের ওপরই চাপিয়ে দিচ্ছে।
জাতিসংঘের এই সম্মেলন বিশ্বকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসযজ্ঞ আর ভবিষ্যতের নয়, এটি এখনই ঘটছে এবং এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে দুর্বল জনগোষ্ঠী।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক