রাশিয়ার দুই তেল কোম্পানির ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, পুতিনের ওপর চাপ বাড়বে কি?
রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েল-এর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে শান্তি চুক্তিতে রাশিয়াকে রাজি করানোর চাপ তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম সরাসরি নিষেধাজ্ঞা।
স্থানীয় সময় বুধবার (২২ অক্টােবর) হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে-এর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমি প্রতিবার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলি, আলাপ ভালো হয়, কিন্তু কোনো ফল আসে না।”
ট্রাম্প জানান, নিষেধাজ্ঞাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হোক তা তিনি চান না, তবে শান্তি আলোচনার স্থবিরতায় তিনি হতাশ।
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য, রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিলে ব্যবহৃত তেল রাজস্ব বন্ধ করা। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার নতুন হামলায় সাতজন নিহত হয়, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, পুতিনের যুদ্ধ বন্ধে অস্বীকৃতির কারণেই এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। তার ভাষায়, “রোসনেফট ও লুকঅয়েল ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থ জোগাচ্ছে।”
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রোসনেফট ও লুকঅয়েলের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ৩০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
রোসনেফট ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি (রাজস্ব অনুসারে), আর লুকঅয়েল সবচেয়ে বড় বেসরকারি তেল প্রতিষ্ঠান।
দুটি কোম্পানি মিলিয়ে প্রতিদিন ৩১ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে—যা রাশিয়ার বিদেশে মোট তেল বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ। রোসনেফট একাই রাশিয়ার মোট উৎপাদনের অর্ধেক তেল সরবরাহ করে, যা বিশ্ববাজারের প্রায় ৬ শতাংশ।
ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা ও কম তেলের দামের প্রভাবে কোম্পানিগুলো আগেই চাপে ছিল। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে রোসনেফটের আয় ৬৮ শতাংশ কমে যায়, আর লুকঅয়েলের লাভ ২০২৪ সালে প্রায় ২৭ শতাংশ হ্রাস পায়।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউরোপের বদলে এশীয় বাজারে তেল রপ্তানি বাড়িয়ে আগের নিষেধাজ্ঞার আঘাত কাটিয়ে ওঠে। তারা “শ্যাডো ফ্লিট” নামে এক অদৃশ্য জাহাজবহর ব্যবহার করে, যেগুলোর কোনো পশ্চিমা আর্থিক সংযোগ বা বিমা নেই। এরপর চীন ও ভারত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয়।
২০২৪ সালে চীন আমদানি করে ১০ কোটি ৯০ লাখ টন রুশ তেল (মোট জ্বালানি আমদানির ২০ শতাংশ)। ভারত আমদানি করে ৮ কোটি ৮০ লাখ টন রুশ তেল।
ট্রাম্প একাধিকবার বেইজিং ও নয়াদিল্লিকে রুশ তেল কেনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি গত আগস্টে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন। তবে চীনের ক্ষেত্রে এখনো সেই পদক্ষেপ নেননি।
তবে নতুন নিষেধাজ্ঞায় রোসনেফট ও লুকঅয়েলের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি ব্যাংকগুলোর ওপরও দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, এসব কোম্পানির তেল লেনদেন পরিচালনা করা ব্যাংকগুলো যদি মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তবে তারাও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পণ্য ব্যবসায়ী ফিলিপে পোলম্যান গনজাগা আল জাজিরাকে বলেন, “যে ব্যাংকগুলো রুশ তেল বিক্রয়ে সহায়তা করে, তারা এখন ঝুঁকিতে পড়বে। চীন ও ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান আমেরিকার আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারাতে চায় না।”
গনজাগা আরও বলেন, “এতে রাশিয়ার তেল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হবে না। সবসময় কিছু লোক থাকবে যারা ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাবে।”
ব্লুমবার্গের বরাতে জানা যায়, ভারতের কয়েকজন শীর্ষ তেল শোধনাগার কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ তেল কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুড ৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলার হয়। মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৬০ ডলার ছোঁয়।
তবে গনজাগা বলেন, “এই ৫ শতাংশ বাড়া সাময়িক। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাবের কারণে জ্বালানি বাজারের মনোভাব এখনো নেতিবাচক।”

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক