বিশ্ব চিঠি দিবস আজ, যেভাবে উদযাপন করবেন দিবসটি
বিশ্ব চিঠি দিবস আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) । আজকের এই দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস হিসেবে স্বীকৃত। তাই বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব চিঠি দিবস। ডিজিটাল যুগেও হাতে লেখা চিঠির আবেগ, আন্তরিকতা ও স্মৃতিচারণকে নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
প্রযুক্তির জাদুতে আজ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মুহূর্তেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির ফলে বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের গতি এবং দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রিয়জনের হাতে লেখা চিঠি পাওয়ার যে অনুভূতি, তা আজকের প্রজন্ম হয়তো কল্পনাই করতে পারে না। তবু কাগজের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা ও স্মৃতিকে ধরে রাখতেই বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস।
আজকের দিনে একটি সুন্দর কাগজে কলম দ্বারা সবচেয়ে প্রিয় একজনকেই না হয় চিঠি লেখা যাক মন খুলে। যে চিঠিতে একটি আন্তরিক সম্বোধন থাকবে, চিঠির পরতে পরতে আবেগ থাকবে, না বলা কথা থাকবে, আর শেষে নিজের নাম স্বাক্ষর করার আগে লেখা থাকবে ‘ইতি তোমার’ বা ‘আপনার স্নেহধন্য।
বহু আগে ইংরেজ কথাকার সমারসেট মম যা বলেছিলেন, বর্তমানের বাস্তবতায় সেটাই সত্যি হয়েছে। চিঠি লেখা আসলেই এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। ‘ভাল আছি ভাল থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, এই গানের বোল বাঁধতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনো দিন ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে!
কয়েক‘শ বছর ধরে যোগাযোগ শুধুমাত্র কয়েকটি উপায়ের মাধ্যমে হয়েছে। আপনি হয় বসে বসে কারও সাথে কথোপকথন করেছেন কিংবা একটি চিঠির মাধ্যমে আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি লিখেছিলেন, যা তাদের কাছে কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন।
বিশ্ব চিঠি লেখা দিবসটি আপনার হাতে লেখা শব্দের বিস্ময় মনে রাখার সুযোগ করে দিবে। তাই যোগাযোগের প্রাচীন রূপকে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে চিঠি লিখুন। দিবসটি আপনাকে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ করার সুযোগ করে দিবে। যাদের সঙ্গে আপনি হয়তো বেশ কিছুদিন ধরে কোনো ধরনের যোগাযোগ কিংবা কথা বলেননি।
দিবসটি যেভাবে উদযাপন করবেন
আজকের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে কাগজ–কলম বের করে লিখতে শুরু করেন। কাকে লিখতে হবে, তা বাছাই করা প্রায়শই সবচেয়ে কঠিন কাজ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনার যে কোনো বয়সের একজন পুরনো বন্ধু, প্রিয় মানুষ বা পরিবারের যেকোনো সদস্য নির্বাচন করা উচিত।
একটি লিখিত ব্যক্তিগত চিঠি পাওয়া তরুণদের জন্য অভিনব হতে পারে। এটি এমন কিছু যা আর কখনো করা হয়না এবং এটি লেখার মাধ্যমে আপনি তাদের সঙ্গে অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।
এ ছাড়া আপনি ক্যালিগ্রাফি অনুশীলন করে বিশ্ব চিঠি লেখা দিবস উদযাপন করতে পারেন। তবে চিঠিগুলো সুন্দরভাবে লেখা হলে আরও ভাল লাগবে। তাই ক্যালিগ্রাফি হলো ব্রাশ বা কলম দিয়ে হাতের লেখা তৈরি করার একটি শিল্প। আপনি ইন্টারনেটে সহজেই কিন্তু ক্যালিগ্রাফি কলম ব্যবহার করতে পারেন।
দিবসটি যেভাবে এলো
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী, লেখক ও আলোকচিত্রী রিচার্ড সিম্পকিন দিবসটির সূচনা করেন। নব্বই দশকের শেষের দিকে তিনি নিজের দেশের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বদের কাছে চিঠি লিখতেন এবং হাতে লেখা উত্তর থেকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হতেন। সেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বিশ্বব্যাপী মানুষকে চিঠি লেখার আনন্দে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেন।
তবে যখন পেতেন, তখন তার আনন্দের সীমা থাকত না। এই আনন্দ নাকি তার কাজকর্মে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিত। সেই ভালোবাসা থেকে সিম্পকিন ২০১৪ সালে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চান চিঠি লেখার চর্চা আবার ফিরে আসুক।
সূত্র: ডেজ অব দ্যা ইয়ার

ফিচার ডেস্ক