আমনের বাম্পার ফলন, ধান কাটার খরচ কমাচ্ছে হারভেস্টার
নেত্রকোনা জেলায় রোপা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এ বছর ধানের ভালো ফলন হওয়ার পাশাপাশি ভালো বাজার থাকায় কৃষকেরা খুশি। এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। জেলার হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা- মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরির বেশিরভাগ ফসলি জমি পানির নিচে থাকায় জেলার বাকি সাতটি উপজেলার রোপা আমন চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও এ বছর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলেও ভাইরাস ও পোকার আক্রমণে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে রোপা আমন চাষে বৃষ্টির পানিতে সেচের কাজ হয়ে যাওয়ায় এতে খরচের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
জেলার দুই পাহাড়ি উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় রোপা আমনের চারা আগেভাগে রোপণ করা হয় বলে সবার আগে ফসল কাটা শুরু হয়েছে এই দুই উপজেলায়। সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকেরা পাহাড়ের পাদদেশে ধান কাটছেন এবং সীমান্তবর্তী বাড়িগুলোতে কিষানিরা নবান্ন উৎসবের আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন ধান ঘরে আসার এই সময়ে কৃষকদের পাশাপাশি কিষানিরাও ধান সিদ্ধ করা, শুকিয়ে সংরক্ষণ করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সমান তালে অংশ নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার উলুয়াটি গ্রামের কিষানি রেহানা পারভীন জানান, সোনালি ধান কাটার পর ধান শুকানোর স্থান প্রস্তুত, মাড়াই, সিদ্ধ করা এবং রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করাসহ তাদের কাজ শুরু হয়ে যায়। নতুন ধান ঘরে এলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে এবং ঘরে ঘরে নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা, পুলি, পায়েশ বানানোর তোরজোড় চলে।
সীমান্তবর্তী কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি কাঠাপ্রতি ৪ মণ করে ধান পেয়েছেন। আরেক কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে সেচের খরচ না থাকায় কৃষকেরা ধান চাষে লাভবান হয়েছেন এবং খরচ বাদে মুনাফাও থাকবে।
ধানের ব্যবসায়ীরাও এ বছর ভালো ফলন ও ভালো দামের আশা করছেন। ধান ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কাঁচা ধান প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় ওঠানামা করছে এবং ধান শুকানোর পর এর দাম আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন।
তবে স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানের বাজার ভালো থাকলেও বর্তমানে ধান কাটার শ্রমিকের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। শ্রমিকেরা এখন শহরমুখী হওয়ায় কাজের জন্য তাদের পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিনের দিকে ঝুঁকছেন। কাঠাপ্রতি ৫০০ টাকা খরচ করে এসব মেশিনের মাধ্যমে কম সময়ে অধিক জমির ফসল কাটা যাওয়ায় কৃষকদের কষ্ট লাঘব হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম জানান, জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে মোট ২৩ হাজার ৯৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা মোট আবাদের ১৬ ভাগ। তিনি জানান, কৃষকেরা তাদের আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাওরের ডুবন্ত জমিগুলো জেগে উঠতে শুরু করায় কৃষকেরা যেন সেসব জমিতে রবি শস্য উৎপাদন করতে পারেন, সেজন্য তাদের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)