ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক : ‘প্রতীকী বিজয়’ হচ্ছে রাশিয়ার?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কায় বৈঠক হচ্ছে, যা নিয়ে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বে উদ্বেগ থাকলেও রাশিয়ায় অনেকে এটিকে ‘প্রতীকী বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। ক্রেমলিনের চোখে, এই বৈঠক বিশ্বের মঞ্চে পুতিনের অবস্থান পুনরুদ্ধার করবে।
মস্কোর বাসিন্দা দামির গুরিন এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি বলেন, এটি সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার জন্য একটি সংকেত হতে পারে। এটি আর কেবল কূটনীতি নয়, এটি ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন।
তবে সেন্ট পিটার্সবার্গের একজন পেনশনভোগী ক্যাথেরিনের মতো অনেকে এখনো সন্দেহপ্রবণ। তিনি বলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তারা অবশ্যই যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হবে।
ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে হামলার সমালোচনা করলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে কিছু জমি ছেড়ে দিতে হতে পারে। তিনি বলেন, উভয়ের উন্নতির জন্য কিছু অঞ্চল বিনিময় করা হবে। এই মন্তব্যের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয়রা তাদের জমি দখলদারদের উপহার দেবে না।’
রাশিয়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইটস্কিস মনে করেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে কোনো প্রকৃত আপস হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মতে, পুতিনের দিক থেকে এটি বিশ্বে তার অবস্থান পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়। আমেরিকান ভূখণ্ডে এসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করা এক প্রকার সম্মানের প্রতীক। এটি রাশিয়ার জন্য একটি প্রতীকী বিজয়, যা প্রমাণ করে, আপস না করে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ধীরে ধীরে দূর হবে।
বুদ্রাইটস্কিস আরও বলেন, ট্রাম্পের কাছেও এই বৈঠকের একটি প্রতীকী মূল্য আছে। এটি প্রমাণ করে, তিনিই একমাত্র নেতা যিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম ও ইউক্রেন সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
এদিকে, ডিগোরিয়া প্ল্যাটফর্মের পরিচালক জাউরবেক খুগায়েভ বলেন, ইইউ ও ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে এই বৈঠক হওয়া এটাই প্রমাণ করে, ট্রাম্প ও পুতিন উভয়ই জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের অবস্থানকে ধ্বংসাত্মক মনে করেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেক্সি নেচায়েভ মনে করেন, ইউক্রেন ছাড়াও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ও ইউরোপের নতুন নিরাপত্তা কাঠামো নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তার মতে, মস্কো ইউক্রেনীয় সংঘাতকে ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্কের বৃহত্তর সংকটের অংশ হিসেবে দেখে।
এটি হবে ২০১৯ সালের পর পুতিন ও ট্রাম্পের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। যদিও ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই আদালতের সদস্য না হওয়ায় তার গ্রেপ্তারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক