দল নির্বাচন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা জানালেন বুলবুল
প্রায় সময়ই সমালোচনা হয়-বাংলাদেশের ক্রিকেট আটকে আছে রাজধানী ঢাকার মধ্যে। পুরো দেশের ক্রিকেট পরিচালনা হয় এখান থেকেই। জাতীয় দলের পাইপলাইন তৈরি থেকে শুরু করে বিভাগীয় কিংবা জেলার দল বাছাই পর্যন্ত হয় মিরপুর থেকেই। ফলে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রতিভা অন্বেষণ হয় না সেভাবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঘরোয়া কাঠামোর এসব পরিবর্তনের কথা বলে আসছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সেই লক্ষ্যে সারাদেশের প্রায় সকল জেলা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট, জেলা ক্রীড়া অফিসার, জেলার ক্রিকেট কোচ, জেলার নারী উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুই দিনের এই ক্রিকেট কনফারেন্স চলছে।
গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) ছিল প্রথম দিন। প্রথম দিন শেষে আশ্বাস মিলেছে পরিবর্তনের। আগামী মৌসুম থেকে বিভাগীয় দল নির্বাচন হবে বিভাগ থেকেই।
বিসিবি সভাপতি বুলবুল বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি… সম্ভবত এ বছরই শেষবার, আমরা বিভাগীয় দলের খেলোয়াড় মিরপুর থেকে নির্বাচন করছি। এনসিএল, বিসিএল বা যুব প্রিমিয়ার লিগ– এই টুর্নামেন্টগুলোর খেলোয়াড় নির্বাচন সামনে সম্পূর্ণ বিভাগ থেকেই হবে। বিভাগীয় নির্বাচকরাই সেটা করবেন।’
তবে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে সামনে আসবে কিছু সমস্যাও। প্রশ্ন আসবে- বিভাগীয় নির্বাচকরা সঠিকভাবে খেলোয়াড় নির্বাচন করছে কি-না সেটা দেখভাল করবে কারা? বুলবুল জানালেন, সমাধানের পথও তৈরি করে রেখেছেন তারা।
বুলবুল বলেন, ‘বিভাগীয় নির্বাচকরা সঠিকভাবে খেলোয়াড় নির্বাচন করছে, এটা দেখভাল করবে কে? প্রশ্নটা যুক্তিসঙ্গত। এখন যে নির্বাচনটা হয়, সেটা করে পেশাদার জাতীয় নির্বাচকরা। তাদের কাজ স্বচ্ছ। তবে এটাও ঠিক, তারাও মানুষ। তারা হয়তো জানে না পঞ্চগড়ে একটা বাঁহাতি লেগ স্পিনার আছে বা বরিশালে নতুন একজন ভালো ব্যাটার উঠেছে। এজন্যই আমরা স্টেজ টু করছি। স্টেজ ওয়ান ছিল আজকের কনফারেন্স।’
স্টেজ টু কি বা কীভাবে কাজ করবে সেটি, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে বিসিবি সভাপতি বুলবুল বলেন, ‘স্টেজ টুতে আমরা ছোট ছোট বিসিবি অফিস তৈরি করব। সেখানে থাকবে হেড অব চট্টগ্রাম ক্রিকেট, হেড অব রংপুর ক্রিকেট। যে লোক দায়িত্ব নেবে, তার রেফারেন্স, প্রক্রিয়া আর বিচারবোধের ওপরই নির্বাচনের মান নির্ভর করবে। এসব প্রক্রিয়া আমরা ঠিক করে ফেলব।’
বলা যায়, এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপই হবে জাতীয় দল নির্বাচন। অর্থাৎ ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো করবে তাদের নিয়েই জাতীয় দল নির্বাচন করা হবে। কিন্তু বিভাগীয় দল নির্বাচনে যদি কোনো ফাঁক-ফোকর থাকে, তাহলে তার প্রভাব পড়বে জাতীয় দল নির্বাচনে। সহজ ভাবে বলা যায়, বিভাগীয় দল নির্বাচনে ঝামেলা হলে পুরো সিস্টেমই ভেঙ্গে পড়বে।
আরও পড়ুনঃ জাহানারার ঘটনা নিয়ে যা বললেন আমিনুল
সেটি মাথায় আছে বুলবুলেরও। তিনি বলেন, ‘এখানে যদি কোথাও ফাঁক থাকে, যদি ব্যক্তি দোষে কাজ ব্যাহত হয়, তাহলে সব প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে। এখন পেশাদার নির্বাচকরা কিছু পদ্ধতি অনুযায়ী নির্বাচন করেন-পাঁচ ব্যাটার, এক উইকেটকিপার, তিন ফাস্ট বোলার। তখন দেখতে হবে নির্বাচনটা কতটা স্বচ্ছভাবে হচ্ছে। কাজটা খুব চ্যালেঞ্জিং। তাই যোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া এবং তাকে সঠিক নীতিমালা দেওয়া দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে বাংলাদেশের তৃণমূলের ক্রিকেটে আছে অনেক শঙ্কার জায়গাও। বাংলাদেশের অনেক জেলা ক্রিকেট কোচেরই আলাদা একাডেমি আছে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় একটা শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়ে যায়। সেটি অবশ্য কড়া হুশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বুলবুল।
বুলবুল বলেন, ‘যিনি জেলার কোচ, তার নিজের একাডেমি আছে। তখন তো স্বার্থের সংঘাত তৈরি হবে। এটা রোধে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। জেলা বা বিভাগীয় কোচরা হয় একাডেমি চালাবেন, না হয় জেলা কোচিং করবেন, দুটো একসঙ্গে নয়।’
আরও পড়ুনঃ আবারও অধিনায়কত্বে ফেরার কারণ জানালেন শান্ত
তবে শুধু জেলার ক্রিকেট কোচ হয়ে সংসার চালানোও দায় হয়ে যাবে কোচদের। কারণ, আমাদের বেতন কাঠামো। তবে সেখানেও পরিবর্তন কথা জানালেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘এটাও সত্য, বর্তমান বেতনে শুধুই ক্রিকেট পেশায় টিকে থাকা কঠিন। আমরা কোচদের বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করছি। বাড়ানো গেলে তারা জেলা ও বিভাগীয় কাজে আরও মনোযোগী হবে।’

স্পোর্টস ডেস্ক