শহীদ নূর হোসেন দিবস: গণতন্ত্রের জন্য এক রক্তক্ষয়ী শপথ
আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের ইতিহাসে এই দিনটি এক অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের প্রতীক। ১৯৮৭ সালের এই দিনে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল নূর হোসেনের তাজা রক্তে। তাঁর এই প্রয়াণ দিবসটিই স্মরণ করিয়ে দেয়, গণতন্ত্র কোনো সহজলভ্য অর্জন নয়, বরং এটি ছিনিয়ে আনতে হয় বুকের রক্ত দিয়ে।
জীবন পোস্টার: 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক'
সেদিন ছিল সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনতার এক উত্তাল আন্দোলনের দিন। হাজারো প্রতিবাদী মানুষের ভিড়ে নিজেকে এক 'জীবন্ত পোস্টার' হিসেবে রাজপথে নামিয়ে এনেছিলেন নূর হোসেন। তাঁর খালি গায়ে ও পিঠে ছিল স্পষ্ট স্লোগান— ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’। এই স্লোগান শুধু তাঁর একার ছিল না, ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ গোটা জাতির মনের কথা।
অকুতোভয় এই যুবক যখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয় সেই বুলেট। তাঁর আত্মবলিদান গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় রচনা করলেও, এটিই ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট।
অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম ও অনিবার্য পরিণতি
নূর হোসেনের রক্তে ভেজা রাজপথ গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে এক অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর আত্মত্যাগ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে এবং তিন জোটের সংগ্রামকে এক অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে। সেই সময়ের প্রবল শক্তিশালী স্বৈরশক্তিও শেষ পর্যন্ত এই অকুতোভয় নূর হোসেনদের জন্যই মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ সংগ্রামের পর নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে তৎকালীন স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণেই দিবসটি গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে।
আজকের দিনের শপথ
শহীদ নূর হোসেন শুধু একটি নাম নয়, তিনি প্রতিবাদের সাহস ও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাঁর মহান আত্মত্যাগ স্মরণ করে। আজকের দিনে আমাদের শপথ হওয়া উচিত, তাঁর রক্তে কেনা গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করা এবং কোনো ধরনের স্বৈরাচারী মানসিকতা বা অপশক্তির উত্থান যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকা। নূর হোসেনের 'জীবন পোস্টার' আজও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— গণতন্ত্রের পথ কখনও মসৃণ হয় না, কিন্তু এর মুক্তি অনিবার্য।

ফিচার ডেস্ক