‘হি-ম্যান' ধর্মেন্দ্র : পর্দার পেছনের তারকা
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধর্মেন্দ্র সিং দেওল একটি কিংবদন্তী নাম। তাঁর প্রায় ছয় দশকের বর্ণময় কেরিয়ার তাঁকে কেবল একটি 'সুপারস্টার'-এর তকমাই দেয়নি, বরং এনে দিয়েছে 'হি-ম্যান' এবং 'গার্লস-ড্রিম' উপাধি। তাঁর সুদর্শন চেহারা, শক্তিশালী শারীরিক গঠন এবং আন্তরিক অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে কালজয়ী জনপ্রিয়তা।
ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ার মোড় নেয় ১৯৬৬ সালে 'ফুল অউর পাত্থর' সিনেমার মাধ্যমে, যেখানে তাঁকে প্রথমবার একজন অ্যাকশন হিরো হিসেবে দেখা যায়। এই সিনেমা তাঁকে রাতারাতি সুপারস্টার বানিয়ে দেয়। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে, অ্যাকশন ঘরানায় তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ১৯৭০-এর দশকে। ১৯৭৫ সালের 'শোলে' (Sholay)-এর 'বীরু' চরিত্রটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব, হেমা মালিনীর সঙ্গে রোম্যান্স এবং প্রাণবন্ত অ্যাকশন তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। 'ধরম-বীর' (Dharam-Veer, ১৯৭৭)-এর মতো বিনোদনমূলক অ্যাকশন সিনেমাগুলো তাঁকে জনসাধারণের কাছে 'হি-ম্যান'-এর আসনে পাকাপোক্তভাবে বসিয়ে দেয়।
ধর্মেন্দ্রর বড় গুণ ছিল তাঁর চরিত্রে বৈচিত্র্য আনার ক্ষমতা। তিনি কেবল অ্যাকশন স্টার ছিলেন না, বরং সংবেদনশীল চরিত্রেও সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন। সমালোচকরা তাঁর সেরা অভিনয়গুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে মনে করেন বিমল রায় পরিচালিত 'বন্দিনী' (Bandini, ১৯৬৩) এবং হৃষিকেশ মুখার্জি পরিচালিত 'অনুপমা' (Anupama, ১৯৬৬)।
তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ হলো 'সত্যকাম' (Satyakam, ১৯৬৯)। এই ছবিতে তিনি এক আদর্শবাদী যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখে নিজের আদর্শ বজায় রাখতে চান। এই চরিত্রে তাঁর অভিনয় গভীরতা ও সংবেদনশীলতার এক বিরল নিদর্শন। কমেডি ঘরানাতেও তিনি ছিলেন দারুণ সফল, যার প্রমাণ 'চুপকে চুপকে' (Chupke Chupke, ১৯৭৫)-এর মতো ক্লাসিক কমেডি।
ধর্মেন্দ্রর এই পথচলা প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একটি 'অ্যাকশন মেশিন' ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন এক প্রকৃত অভিনেতা যিনি অ্যাকশন, রোম্যান্স এবং ড্রামা সবকিছুতেই সাবলীলভাবে মানিয়ে নিতে পারতেন। আর তাই, ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই দীর্ঘ মহাকাব্যে, ধর্মেন্দ্র আজও চিরন্তন 'হি-ম্যান' হয়েই জ্বলজ্বল করছেন।

বিনোদন ডেস্ক