সালমান শাহ কেন এত জনপ্রিয়?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে কিছু নাম সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কিংবদন্তী হয়ে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলেন অমর নায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার, কিন্তু সেই স্বল্প সময়েই তিনি ঢাকাই সিনেমার গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন।
১৯৯০-এর দশকে যখন তিনি চলচ্চিত্রে আসেন, তখন গতানুগতিকতার ভিড়ে সালমান শাহ নিয়ে এসেছিলেন এক নতুন ধারা, যার কেন্দ্রে ছিল আধুনিকতা, রোমান্টিকতা এবং অসামান্য তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরেও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি, বরং প্রতি বছরই নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। তার এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র কিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের কারণে নয়, বরং এর নেপথ্যে কাজ করেছে তার অভিনয় দক্ষতা, স্টাইল আইকন হিসেবে তার প্রভাব, এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় তার আকস্মিক ও রহস্যময় প্রস্থান, যা তাকে দর্শকদের হৃদয়ে এক অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এই ভূমিকা সালমান শাহের সেই কালজয়ী প্রভাব এবং মৃত্যুর পরেও তার জনপ্রিয়তার মূল কারণগুলো অনুসন্ধানে আলোকপাত করবে।
তিনি তার সময়ে গতানুগতিক নায়কদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ধারা নিয়ে এসেছিলেন। তার অভিনয়, সংলাপ বলার ধরন এবং পর্দায় রোমান্টিক অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা ছিল অসাধারণ, যা দর্শকদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি মূলত 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার হাত ধরে বাংলা সিনেমায় সামাজিক-অ্যাকশনধর্মী ও নিটোল প্রেমের নতুন একটি ধারা শুরু হয়।
সালমান শাহ ছিলেন নব্বই দশকে বাংলাদেশের পপ সংস্কৃতিতে ফ্যাশনের দিক থেকে এক যুগান্তকারী নাম। তার পোশাক-পরিচ্ছদ, চুলের স্টাইল, স্মার্টনেস এবং আধুনিক ব্যক্তিত্ব তৎকালীন তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ এবং অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। অনেকে তার মতো হতে চাইতেন। তিনি শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের আবারও হলমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মাত্র চার বছরের স্বল্প চলচ্চিত্র জীবনে (১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬) তিনি ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার বেশিরভাগই ছিল অত্যন্ত আলোচিত ও ব্যবসাসফল। এত কম সময়ে তার এই অভূতপূর্ব সফলতা তাকে একজন ক্ষণজন্মা তারকার খেতাব দিয়েছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যখন তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে, তখন তিনি জনপ্রিয়তার একেবারে চূড়ায় ছিলেন। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তার আকস্মিক চলে যাওয়া তার ভক্তদের মনে এক গভীর শূন্যতা এবং অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে। অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষকের মতে, "কোনোকিছু তৃপ্তি শেষের আগে ফুরিয়ে গেলে আকাঙ্ক্ষা থেকে যায়।" সালমান শাহের ক্ষেত্রেও দর্শকের সেই আকাঙ্ক্ষা আজও রয়ে গেছে। তার মৃত্যুরহস্য আজও অমীমাংসিত থাকাটাও অনেক ভক্তের কাছে তাকে একটি 'রহস্যময় নায়ক'-এর আসনে বসিয়েছে, যা তার জনপ্রিয়তাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, তার মৃত্যুর বহু বছর পরেও যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের কাছেও সালমান শাহ একটি প্রিয় নাম। ডিজিটাল মাধ্যমে তার কাজ, গান এবং স্টাইল দেখে এই নতুন প্রজন্ম তার ভক্ত হয়েছে এবং অনলাইন-অফলাইনে ফ্যান ক্লাব তৈরি করে তাকে স্মরণ করছে।
সালমান শাহ শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন নব্বই দশকের একটি সাংস্কৃতিক আইকন, যিনি তার অভিনয়, স্টাইল, এবং অকালমৃত্যুর কারণে আজও বাংলাদেশের আপামর সিনেমাপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।

বিনোদন ডেস্ক