মম ছুঁয়েছেন দর্শক-হৃদয়
‘দারুচিনি দ্বীপে’র ‘জরি’, ‘প্রেম করব তোমার সাথে’র ‘স্বপ্ন’ ও ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির ‘নীলা’ ঢালিউডে এই তিন চরিত্র বেশ জনপ্রিয়। জরি, স্বপ্ন, নীলা এই তিন চরিত্রের নায়িকা এ প্রজন্মের প্রিয়মুখ জাকিয়া বারী মম। তিনটি চরিত্র সফলভাবে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেছেন তিনি।
নিজের প্রিয় চরিত্রটি কোনটি? জিজ্ঞাসা করতে একগাল হেসে মম বলেন, আমার কাছে তো সবই প্রিয়। প্রতিটি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, কাঠামো আলাদা ছিল। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ মুক্তির পরে রাস্তায় আমাকে কেউ দেখলে ‘জরি’ বলে ডাকত। ‘স্বপ্ন’ চরিত্র দিয়ে ঢালিউডে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে আমার অভিষেক ঘটে।’
‘আর নীলা? এটা তো আমার স্বপ্নের চরিত্র। নীলা নামের মধ্যে আলাদা একটা জাদু আছে। না হলে দর্শক নীলার জন্য এত পাগল হবে কেন?
দর্শক কী রকম পাগলামি করছে জিজ্ঞাসা করতে মম উত্তর দিলেন, এটা হয়তো পাগলামি, না হয়তো খাঁটি ভালোবাসা। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির ট্রেইলার মুক্তির পর থেকে দর্শকরা ফেসবুকে, বাইরে দেখা হলে অনেক প্রশংসা করেছেন। আর যখন ছবি মুক্তি হলো, তখন তো এক দর্শক দুই থেকে তিনবার হলমুখী হয়েছেন।
ছবিটি সফল হওয়ার পর কেমন লাগছে? প্রশ্ন শুনে মম ভেবে বললেন, যে কোনো সাফল্য অনেক বেশি ভালো লাগে। দর্শক ছবিটি দেখার পর যখন বলেছে, ভালো লাগছে, এটা অনেক বড় বিষয়। আমি মূলত দর্শকদের এই সাড়া পাওয়ার জন্য কাজ করি। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিটি আমার জন্য অনেক বিশেষ কিছু। কারণ ছবিতে অনেক শ্রম ব্যয় করেছি আমরা। আর যেকোনো কাজ পরিশ্রম করে সফল হলে সেই আনন্দটা অন্যরকম। যেমন কাউকে নিজে থেকে বলতে হয়নি- আপনারা দেখেছেন ছবিটা? ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচুর তথ্য এখন জানা যায়।
ফেসবুকে খুদেবার্তায় আমি পড়েছি, ছবিটি দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়বার সবাই দলবেঁধে দেখতে গিয়েছে। যখন দর্শক দুবার একই ছবি দেখতে যায়, তখন আমরা সেই ছবিকে সফল বলতে পারি। আর সফল ছবির নায়িকা বা অভিনেত্রী হিসেবে বলব, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হিসেবে অভিষেক এত দেরিতে কেন হলো? প্রশ্ন শুনে মম সরল জবাব দিলেন এভাবে, ‘নায়িকা হয়ে ওঠা এত সহজ কাজ নয়। একজন নায়িকা হওয়ার জন্য যে সংগ্রামগুলো করতে হয়, সেগুলো এতদিন ধরে করার চেষ্টা করেছি। যতটুকু সফল হয়েছি, এটা আমার জন্য বোনাস। আরো অনেক পথ বাকি। এখন সব ভাবনা আমার চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক।
বলিউডের শাহরুখ-কাজল, ঢালিউডের সালমান শাহ্-শাবনূরের জুটি খুব পছন্দ করেন মম। আরিফিন শুভ ও মম জুটিও ঢালিউডের দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ছবির প্রথম প্রদর্শনীর পর নায়ক শুভ নায়িকা মমকে ফিসফিস করে কী বলেছেন জিজ্ঞাসা করতে মম রোমান্টিক হাসি দিয়ে বলেন, ‘এটা বলা কি ঠিক হবে? তবু বলছি শুভ বলেছে, ‘মম আমরা জিতেছি।’
তাহলে শুভর সঙ্গে আপনি কি আবারও জুটি বাঁধবেন? মম জানালেন, ছোটবেলা থেকে সালমান শাহ্-শাবনূর-মৌসুমী জুটি আমাকে খুব আকর্ষণ করত। দর্শকরা চাইলে আবারও আমি আর শুভ রুপালি পর্দায় হাজির হব। প্রথম পছন্দ দর্শকের, তারপর প্রযোজক ও পরিচালকদের। শুভর সঙ্গে কাজ করতে যেমন আমার ভালো লাগে, তেমনি বাপ্পী ও নতুন নায়কদের সঙ্গেও কাজ করতেও আপত্তি নেই। আমি ভালো ভালো কাজ করে যেতে চাই। সবার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। যদি সুযোগ হয়, তাহলে অনেক খুশি হব। অনেকে ভাবেন নাটক করে যাঁরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তাঁরা ভালো করতে পারেন না। কিন্তু আমার প্রযোজক ও পরিচালকরা আমাকে নিয়ে সে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। শুভ অনেক সংগ্রাম করে বড় পর্দায় কাজ করছে। আমিও করছি। আমি শুধু বলব ক্যামেরার সামনে শিল্পীরা অনেক সৎ। তাঁরা কাজ অনেক ভালোবেসে করেন।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আগামী ৯ ও ১০ মে দুদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বোম্বে থিয়েটার হলে সাড়ে ৩টার শোতে ছবিটি দেখানো হবে। আপনার অনুভূতি কেমন?
মম বললেন, অনেক ভালো। ছবি মুক্তির পর প্রবাসী ভক্তরা অনেক খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন ছবিটি তাঁরা দেখতে চান। আরো বেশ কিছু দেশে ছবি মুক্তির কথা চলছে।
চলচ্চিত্রে থিতু হওয়ার কথা ভাবলেও পড়াশোনাও ব্যস্ততার মধ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন মম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব’ বিভাগে অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল শেষ করে এখন ‘অভিনয় শৈলী’র ওপর গবেষণা শুরু করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মমর বক্তব্য হলো, আমি যখন স্কুলে পড়েছি, তখন মনে হতো কবে কলেজে ভর্তি হব। কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো মনে করি আমি একতলায় আছি, আমাকে আরো ২০ তলা উঠতে হবে। আমার বাবা-মা-শিক্ষকরা চান আমি গবেষণা শেষ করি। অভিনয় কখনো ছাড়তে চাই না এবং অভিনয়ের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছি, এটা আমার ভালোলাগার জায়গা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আসলে আমার ছাড়তে ইচ্ছে করে না।
এদিকে ছবি মুক্তির পর থেকে মম বাসা থেকে বের হতে লজ্জা পাচ্ছেন। বের হলে ভক্তরা ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মম বিষয়টি উপভোগ করলেও খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে চান না।


নাইস নূর