শুভ জন্মদিন অক্ষয় কুমার
বলিউডে তিনি পরিচিত ‘খিলাড়ি’ নামে। অক্ষয়ের জীবনটাই যেন একটা সিনেমার চিত্রনাট্য। জীবনে অনেক কিছুই করেছেন, শেষমেশ থিতু হয়েছেন অভিনয়ে। আজ ৯ সেপ্টেম্বর অক্ষয় কুমারের ৪৮তম জন্মদিন। জীবনের ৪৮তম বছরের প্রথম দিনে দিনটি কাটাবেন বউয়ের সাথে। অভিনেত্রী টুইঙ্কেল খান্নার সঙ্গে ২০০২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অক্ষয়।
২৫ বছর ধরে বলিউডে আছেন অক্ষয়। সব সময় বিনীত এই অভিনেতা কাজের জন্য শত ভাগ দিতে রাজি। আর তাই তো এত বছর পেরোলেও খান-কাপুরদের দাপটের বিপরীতে অক্ষয় একাই একশো! এখনো বছরে চার-পাঁচটা ছবি করেন তিনি। রাতারাতি হিট না হলেও অক্ষয়ের ছবির ফ্লপের সংখ্যা হাতেগোনা।
কয়েকদিন আগে মুক্তি পেয়েছে তাঁর ‘ব্রাদার্স’ ছবিটি। এই ছবিতে তাঁর সাথে ছিলেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা এবং জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ। সামনে মুক্তি পাবে ‘সিং ইজ ব্লিং’ ছবিটি। এটি অক্ষয়ের ক্যারিয়ারের ১২৩তম ছবি। জন্মদিনে খিলাড়ি অক্ষয়ের ব্যাপারে মজার কিছু তথ্য দিয়েছে মিড ডে
আসল নাম
অক্ষয় কুমারের আসল নাম রাজিব ভাটিয়া। অক্ষয়ের বাবা হরি ওম ভাটিয়া ছিলেন একজন সেনা অফিসার। অক্ষয়ের নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘হরি ওম প্রোডাকশন’ এর নামকরণ করা হয়েছে অক্ষয়ের বাবার নামে।
মার্শাল আর্টিস্ট
এ কথা অনেকেরই জানা থাকার কথা। তায়াকোন্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন অক্ষয়। এ কারণেই ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পান তিনি। আর সে সময়ে তাঁকে অ্যাকশন ছবির জন্যই বেছে নিতেন পরিচালকরা।
মডেলিংয়ে যেভাবে
ব্যাংককে ওয়েটার এবং শেফ হিসেবে কাজ করে ভারতে ফিরে আসেন অক্ষয়। তিনি চেয়েছিলেন মার্শাল আর্টের শিক্ষক হতে। সেই মার্শাল আর্টের ক্লাসের এক ছাত্রই তাঁকে পরামর্শ দেন মডেলিংয়ের। সেখান থেকেই মডেলিংয়ের কাজ শুরু করেন অক্ষয়। মাত্র দুদিন কাজ করে যে পয়সা পেলেন তা ছিল তাঁর তখনকার মাসিক বেতনের চেয়ে বেশি। আর সে কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন মডেলিংয়েই ক্যারিয়ার গড়বেন।
হুট করে অভিনয়ে
মডেল হিসেবে থাকতে চাইলেও ভাগ্যচক্রে জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন মডেলিংয়ের এক অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে। এই ফাঁকে ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলেন নিজের পোর্টফোলিও নিয়ে। ভাগ্যে ছিল, তাই সেদিন সন্ধ্যাতেই প্রযোজক প্রমোদ চক্রবর্তীর ছবি ‘দিদার’ সাইন করেন অক্ষয়।
বছরে চার-পাঁচটা ছবি করেন
অক্ষয়ের সমসাময়িক যেসব নায়ক রয়েছেন তাঁরা বছরে বড়জোর একটা বা দুটা ছবি করেন। বিশেষ করে ‘খান’ সাহেবরা। তবে অক্ষয় এদিক থেকে বেশ পরিশ্রমী। প্রতিবছর গড়ে তাঁর চার থেকে পাঁচটা ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে দুটি হবে বাণিজ্যিক ছবি আর দুটি ছবি তাঁর নিজের পছন্দমত গল্প দেখে। কারণ তাঁকে যেমন অভিনয় করে খেতে হয় তেমনি অভিনয়টা করতে তিনি ভালোও বাসেন। দুই ধরনের চাহিদা পূরণের জন্যই অক্ষয়ের এই ব্যবস্থা। এমনকি ভালো ছবি হলে আর প্রযোজকের কাছে পয়সা না থাকলে নিজের পারিশ্রমিকে ছাড় পর্যন্ত দেন অক্ষয়।
সকাল বেলার পাখি
বলিউড সেলিব্রেটিদের রাত শুরু হয় সাধারণত ৩-৪টার দিকে। এদিক থেকে ব্যতিক্রম অক্ষয়। তিনি ঘুম থেকে ওঠেন ভোর ৫টায়। আর তাঁর ইন্টারভিউ নিতে হলে সকাল ৬টার মধ্যে হাজির থাকতে হবে।
বাড়তি মেকআপ নেন না
পর্দায় বয়স কমানোর জন্য আলাদাভাবে কোনো চেষ্টা করেন না অক্ষয়। পর্দার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু মেকআপই নেন তিনি। তাঁর মতে, ‘আমার বয়স যদি ৫০ হয় তাহলে আমি চাই আমাকে সেই রকমই দেখাক।’
জিমে কোনো যন্ত্র নেই
অক্ষয় নিজে একজন মার্শাল আর্টিস্ট। সেজন্য তাঁর জিমে ব্যায়াম করার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তিনি দৌড়ান, বক্সিং করেন এবং মার্শাল আর্ট চর্চা করেন। এটাই তাঁর শরীর চর্চার নিয়মিত রুটিন।
রাতের খাবার
সন্ধ্যা ৭টার পর আর কিছু মুখে তোলেন না অক্ষয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সূর্যাস্তের পর আপনার শরীর এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়ে। তখন আর ক্যালোরি খরচ হয় না। তাই বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই। সেই হিসেবেই আমি সকাল সকাল দিন শুরু করি। সন্ধ্যার পর আর খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’
হোন্ডা সিআরভি
বলিউডের অন্যান্য নায়কদের মতো তাঁরও বিলাসবহুল গাড়ি আছে। কিন্তু তিনি বেশি ব্যবহার করেন তাঁর হোন্ডা সিআরভি গাড়িটি। তার মতে, ভারতের রাস্তার জন্য হোন্ডার গাড়িই সবচেয়ে উপযুক্ত।
সাধারণ জীবন যাপন
সাধারণ জীবন যাপন এবং বিনয়ী আচরণের জন্য বলিউডে সুনাম রয়েছে অক্ষয়ের। টুইঙ্কেল-অক্ষয় পুত্র আরাভ নিজেও একজন মার্শাল আর্টিস্ট। বাবার কাছ থেকেই এই বিদ্যা রপ্ত করেছে সে। এখনো ছোট গাড়িতে করেই স্কুলে যায় সে। অক্ষয় বলেছেন, খুব ভালো কোনো কাজ করলেই দামি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পাবে আরাভ। এমনকি অক্ষয়-টুইঙ্কেল ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণ করলেও আরাভ কিন্তু এখনো ইকোনমি অথবা বিজনেস ক্লাসেই ভ্রমণ করে। অতি আদরে বা বিলাসিতায় ছেলেকে বিগড়ে দিতে চান না অক্ষয়। কষ্ট করে বড় হয়েছেন তিনি আর তাই জানেন জীবন মানেই সংগ্রাম। সেভাবেই প্রস্তুত করছেন ছেলেকে।
হাত খরচ ১০ হাজার রুপি
বলিউডের সুপারস্টার তিনি। কিন্তু তার মাসিক হাত খরচ মাত্র ১০ হাজার রুপি! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। অনেক সময় ১০ হাজার রুপিও লাগে না তাঁর পুরো মাস চলতে। কারণ দিনের খাওয়াটা তিনি সেটেই খান এবং সেজন্য তাঁকে বাড়তি পয়সা দিতে হয় না!
নতুনদের সাহায্য করেন
খুব সাধারণ অবস্থা থেকে বলিউডের শীর্ষস্থানে আরোহন করেছেন তিনি। পরিশ্রমের মূল্য দিতে জানেন তিনি। তাই যখন কোনো নতুন গায়ক বা সঙ্গীত পরিচালকের অ্যালবাম বের হয়, পছন্দ হলে সেটা পয়সা দিয়ে কিনে নেন অক্ষয় এবং গাড়িতে বসে শোনেন। যদি কোনো সঙ্গীত পরিচালকের কাজ ভালো লেগে যায় তাহলে তাঁকে সিনেমায় কাজ পাইয়ে দিতে তদবিরও করেন অক্ষয়।

ফাহিম ইবনে সারওয়ার