পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রের্কড ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা
কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর তীরের হারুয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ১৩টি লোহার দানবাক্স রয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) তিন মাস ২৮ দিন পর সকাল ৭টায় এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা।
মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মাচারীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের একটি দল এই ৩৫ বস্তা টাকা গণনার কাজে অংশ নিচ্ছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দানবাক্স খোলার নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত তিনটি টিনের বাক্স বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে চার মাস ১৮ দিন পর চলতি বছরের ৩০ আগষ্ট পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে রেকর্ড ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছিল প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানান, এবার তিন মাস ২৮ দিন পর আজ সকালে পাগলা মসজিদের ১০টি লোহার দান সিন্দুকসহ অতিরিক্ত ৩টি টিনের ট্রাঙ্ক খোলা হয়েছে। এতে রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দোতলায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার তিন মাস ২৮ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। তাই এবার তিনটি টিনের ট্রাঙ্ক বাড়ানো হয়েছিল। আশা করা যাচ্ছে এবার দানের টাকায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।
এছাড়া, মসজিদটিকে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১০ আগস্ট সকালে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, খুব শিগগিরই দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদের ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তুরস্কের আধুনিক নকশায় বহুমুখী কার্যক্রম সম্পাদনের উপযোগী ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া সব টাকা মসজিদের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এফডিআর হিসেবে রাখা আছে, যা থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ গরিব, অসহায়, অনাথ ও অসুস্থদের জন্য ব্যয় করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এসময় তিনি প্রস্তাব করে বলেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে এই তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। এতে শিক্ষার সুযোগ বাড়বে। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদের ১০তলা ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

আদি রাকিব, কিশোরগঞ্জ (সদর-হোসেনপুর)