মেহেরপুরে মালটা চাষে তরুণের ‘সোনালি বিপ্লব’
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে চার বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হলুদ মালটার বাগান এলাকায় সম্ভাবনার নতুন আলো জ্বালিয়েছে। কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতা বা কারিগরি পরামর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এই বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ও তরুণ উদ্যোক্তা রকিবুল হাসান। তার এই উদ্যোগ আশপাশের কৃষকদের মধ্যে নতুন উৎসাহ তৈরি করেছে।
দিনাজপুরে উদ্যোক্তা মাসুদ করিমের মালটা বাগান ঘুরে দেখেই অনুপ্রাণিত হন রকিবুল। দুই বছর আগে তিনি সাহস করে নিজ গ্রামের চার বিঘা জমিতে মালটা চাষ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত, চারা, সার, সেচ, শ্রমিক ও পরিচর্যাসহ দুই বছরে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। শুরুতে পরিবার ও স্থানীয় অনেকের সন্দেহ থাকলেও এখন গাছে ফল আসতে দেখে সবাই আশ্বস্ত হয়েছে।
রকিবুল হাসান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে তিনি কোনো ধরনের পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা পাননি। সবকিছুই নিজের হিসাবমতো করেছেন। তার ভাষায়, ঝুঁকি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন- ফল দেখে এখন মনে হচ্ছে সেটি সঠিক ছিল।
বাগানে চার বিঘাজুড়ে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি গাছ। পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা সহকারী জানান, শুরুর দিকে প্রতিটি গাছ আলাদা করে নিয়মিত পানি দেওয়া, ঘাস পরিষ্কার, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ- সব কিছুই নিয়ম করে করেছেন তারা। ধীরে ধীরে ছোট চারা ফলদায়ী গাছে পরিণত হতে দেখে তিনি দারুণ আনন্দ পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে চাষ হলে তাদের কাজের সুযোগও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
বাগানের পাশের জমির মালিকও প্রতিদিন এই বাগানের অগ্রগতি দেখেছেন। তার মতে, এটি চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক সাফল্যের গল্প। তাই তিনি এ বছর থেকেই মালটা চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং রকিবুলের কাছ থেকেই চারা নেবেন বলে জানান।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, ধান, সবজি, পেঁয়াজ বা রসুনসহ প্রচলিত ফসলে এখন অনেকেই লোকসানের মুখে পড়ছেন। বাজার অনিশ্চয়তা ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষিতে চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে হলুদ মালটার মতো বাণিজ্যিক ফল চাষ কৃষিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
স্থানীয় এক কৃষক জানান, অনেক আবাদেই এখন ক্ষতি গুণতে হচ্ছে। উন্নত জাতের ফল চাষ করে লাভবান হওয়া গেলে কৃষকেরা আবার উৎসাহ ফিরে পাবেন। তিনিও মালটা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখে রকিবুল এখন নিজ উদ্যোগে চারা উৎপাদনও শুরু করেছেন। ভালো মানের চারা পেতে এলাকার কৃষকেরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি জানান, সবাই যাতে সফলভাবে মালটা চাষ করতে পারেন- এটাই তার ইচ্ছা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ময়নাল কবির বলেন, আমাদের অফিসের পক্ষ থেকে আমি সকল স্থানীয় কৃষককে উৎসাহ দিতে চাই- এ ধরনের উদ্ভাবনী ও বাণিজ্যিক ফল চাষে আগ্রহী হলে আমরা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, পরামর্শ ও সরকারি সহায়তা প্রদান করব। আমরা চাই, মেহেরপুরে এমন মডেল বাগান আরও বেশি হোক, যাতে কৃষকেরা লাভবান হন এবং এলাকার কৃষি চর্চা সমৃদ্ধ হয়।

রেজ আন উল বাসার তাপস, মেহেরপুর