খুনের মামলায় হাজিরা দিতে এসে খুন হলেন মামুন
২৯ বছর আগে হিমেল নামের এক যুবককে খুন করার অপরাধের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে খুন হলেন তারিক সাইফ মামুন (৫৫)। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
তারিক সাইফ মামুনের সাবেক আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজীর জুনিয়র আইনজীবী আজিজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামুন আগে তাদের কাছে হাজিরা দিতো। এক বছর আগে মামুন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে অন্য আইনজীবীর কাছে মামলা নিয়ে চলে যান। তাদের কাছে আর তিনি মামলা পরিচালনা করেন না।
এদিকে আজ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ হিমেল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আসেন মামুন। এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহিন বলেন, ২৯ বছর আগে হিমেল হত্যা মামলায় আজ হাজিরা দিতে সকালের দিকে আদালতে আসেন মামুন। সাড়ে ১০টায় বিচারক এজলাসে ওঠেন। একটা মামলার পরই তাঁর মামলার ডাক আসে। তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাজিরা দেন। তবে এ মামলার কোনো সাক্ষী আসেনি। বিচারক আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদালত ছেড়ে চলে যান।
নথি থেকে জানা গেছে, জাহিদ আমিন ওরফে হিমেল নামের ২৫ বছরের এক যুবককে ১৯৯৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন হিমেলের বন্ধু সাইদও আহত হন। এ ঘটনায় হিমেলের মা জাফরুন নাহার সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২–৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিক সাইফ মামুনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপর আসামিরা হলেন ওসমান, মাসুদ ওরফে নাজমুল হোসেন, রতন, ইমন ও হেলাল।
এদিকে মামুন এক সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০ বছর সাজা খেটে ২০২৩ সালে কারামুক্ত হন মামুন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মল্লিক আহসান সামী গণমাধ্যমকে বলেন, “মামুন হচ্ছেন ইমাম-মামুন গ্রুপের। একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবেই পুলিশের খাতায় তার নাম রয়েছে।”
এদিকে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মামুনকে লক্ষ্য করে আরেক গ্রুপের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলি করেন। সে সময় রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে থাকা আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিন দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সেসময় পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, কারাগারে থাকা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ইমনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসীরা প্রাইভেটকারে থাকা মামুনের ওপর হামলা চালাতে গিয়েছিল। সে সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি ভুবনের মাথায় লাগে।
এ দিকে মামুনের স্ত্রী রিপা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, মামুন একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। আমার স্বামী বিএনপি সমর্থিত একজন কর্মী ও পাশাপাশি ব্যবসা করতো। আজ তার কোর্টে হাজিরা ছিল। আমরা জানতে পারি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। পরে ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে এসে আমার স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তারিক সাঈফ মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী কি না বলতে বলতে পারছি না। তবে তিনি ক্যাপ্টেন ইমন গ্রুপের লোক ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মামুনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আজ সে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার পরেই দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদক