দক্ষ চালক নিতে বাংলাদেশে ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন করবেন জাপানি উদ্যোক্তা
জাপানে কর্মসংস্থানের জন্য বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাপানের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে বাংলাদেশে ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তিনি জাপানের শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়াতামি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
গতকাল (২৬ অক্টোবর) শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ওয়াতানাবে এ ঘোষণা দেন।
ওয়াতানাবে বলেন, ‘আমরা এখন ড্রাইভিং স্কুলটি স্থাপন করতে ১২ হাজার বর্গমিটারের একটি জায়গা খুঁজছি।’ জাপানে দক্ষ চালকের চাহিদা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তির উৎস হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকার উপকণ্ঠে উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক ইউনূসের গত মে মাসে জাপান সফরের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সফরে জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।
আরও পড়ুন : যে কারণে জাপানে বাড়ছে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা
ওয়াতানাবে বৈঠকে জানান, তিনি ইতোমধ্যে নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করেছেন, যেখানে অন্তত তিন হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাপানি এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজের জন্য ৫২ জন কর্মী জাপান গেছেন।’ বর্তমানে একাডেমিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে উল্লেখ করে এটিকে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জাপানি সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও আচরণ শেখানোর ওপর জোর দেন।
ওয়াতানাবে বলেন, ‘শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি শেখানো প্রশিক্ষণের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত। এতে বাংলাদেশিরা জাপানকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং দেশটিতে যাওয়ার আগে উপযুক্তভাবে প্রস্তুত হতে পারবে।’
অধ্যাপক ইউনূস ওয়াতামি গ্রুপের প্রধানকে সেবা, নার্সিং, নির্মাণ ও কৃষি খাতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানান, কারণ এসব খাতে দক্ষ কর্মীরা জাপানে ভালো আয় করতে পারেন।
আরও পড়ুন : আত্মহত্যার হার কমেছে জাপানে
ওয়াতানাবে এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমরাও এগুলো করতে চাই।’
ওয়াতানাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত জাপান সেলের প্রশংসা করেন, যা জাপানি বিনিয়োগকারী ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করছে। জাপানি কোম্পানিগুলোকে যেন নরসিংদীর মনোহরদী পর্যন্ত যেতে না হয়, সেজন্য তিনি ঢাকা বা এর আশপাশে আরেকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের অব্যবহৃত কোনো আইটি পার্ক বা উপযুক্ত ভবন চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেন, যা স্বল্প ব্যয়ে জাপানি ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ড্রাইভিং স্কুলের জন্য জমি এবং নতুন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম জানান, শিগগিরই জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকার আশপাশের সম্ভাব্য আইটি পার্কগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
অধ্যাপক ইউনূস জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান। বর্তমানে বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা হয়, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে ওয়াতানাবে এক দশকেরও বেশি আগে গাজীপুরের নারায়ণকূলে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয়ের কথা স্মরণ করেন, যা অধ্যাপক ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল।
ওয়াতানাবে বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে এখন ১,৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এটি একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান। এখানকার শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করছে।’
বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)