হেমন্তের মায়াবী চিঠি
পাতা ঝরার গান আর কুয়াশার আগমনী
ধরিত্রীতে যখন এক ঋতুর শাসন ফুরিয়ে আসে, প্রকৃতির ক্যানভাসে তখন শুরু হয় অন্য রঙের খেলা। গ্রীষ্মের তীব্রতা আর বর্ষার আর্দ্রতা শেষে নিঃশব্দে আগমন ঘটে স্নিগ্ধ হেমন্তের। এই ঋতু কেবল শীতের পূর্বাভাস নয়, এটি হলো প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে এক কোমল পরিবর্তনের সুর।
হেমন্ত এলে প্রকৃতি যেন এক গভীর নীরবতা ও মায়াবী সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ওঠে। গাছে গাছে তখন শুরু হয় রঙের পালাবদল। সবুজ পাতাগুলো ধীরে ধীরে পরিণত হয় সোনালী, তামাটে আর লালচে রঙে। এই বর্ণিল সজ্জা যেন শরতের বিদায় আর শীতের আগমনের মধ্যবর্তী এক উৎসব। তারপর শুরু হয় ঝরার পালা—শুকনো পাতাগুলো হালকা হাওয়ায় মর্মর শব্দ তুলে মাটিতে আশ্রয় নেয়। এই পাতারাশির ঝরে পড়া আসলে জীবনচক্রের এক চিরন্তন সুর, যা নতুন জীবনের জন্য স্থান করে দেয়।
হেমন্তের এই নীরবতা ভেঙে ধীরে ধীরে প্রকৃতিতে নেমে আসে কুয়াশা। ভোরের দিকে এই কুয়াশার চাদর ঢেকে দেয় চারপাশ। শিশিরভেজা ঘাস আর কুয়াশার আবছা আলোয় পৃথিবী হয়ে ওঠে এক রহস্যময় জগৎ। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা এই কুয়াশা ধরিত্রীকে এক মায়াবী রূপ দেয়। দূর থেকে ভেসে আসা কোনো শব্দ, কিংবা ভোরের শীতল বাতাস—সবকিছুতেই থাকে হেমন্তের এক বিশেষ স্পর্শ।
এই সময় কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন ফসল। মাঠ ভরে থাকা পাকা ধানের সোনালী রং আর কৃষকের মুখে হাসি—সবকিছুতেই লেগে থাকে প্রাচুর্যের ছাপ। নবান্নের উৎসব আর পিঠাপুলির আয়োজন যেন হেমন্তের চিরায়ত ছবি। এটি কেবল শীতের প্রস্তুতি নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক শান্তি ও পরিতৃপ্তির সময়।
হেমন্ত তাই কেবল একটি ঋতু নয়, এটি হলো পরিবর্তনের এক শান্ত পর্যায়। এটি আমাদের শেখায় যে, ঝরে যাওয়া মানেই শেষ নয়, বরং নতুন করে শুরু হওয়ার প্রস্তুতি। প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ রূপ আর কুয়াশার মায়াবী স্পর্শ মনকে এক অজানা প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে। হেমন্তের এই রূপালী দিনগুলো তাই প্রকৃতির এক বিশেষ উপহার, যা আমাদের প্রস্তুত করে শীতের গভীর আলিঙ্গনের জন্য।

ফিচার ডেস্ক