সুদানের যুদ্ধের ক্ষত বয়ে চাদে আশ্রয়, সহিংসতার ট্রমায় বিপর্যস্ত নারীরা
সুদানের নৃশংস যুদ্ধের প্রভাব সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাদে। সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নারীরা গভীর মানসিক ট্রমা বহন করছেন। অথচ তাদের মানসিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া সুদানের সংঘাত ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে। যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া, যাদের অনেকেই শারীরিক নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার ক্ষত, পরিবার হারানোর শোক এবং যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করছেন। খবর আল জাজিরার।
আল জাজিরার সাংবাদিক আহমেদ ইদ্রিস পূর্ব চাদের তুলুম শরণার্থী শিবিরে গিয়ে দেখেছেন, সেখানে আশ্রয় নেওয়া সুদানি নারীদের একটি ছোট দল নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করার জন্য গড়ে তুলেছেন একটি সহায়ক বৃত্ত। যেখানে তারা প্রথমবারের মতো নির্ভয়ে বলছেন, তাদের ওপর কী ঘটেছিল।
বসমা ও তার বোন সেই শিবিরের সদস্য। দুই মাস আগে এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় তারা যৌন সহিংসতার শিকার হন। তাদের ভাষ্য, আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)–সমর্থিত মিলিশিয়ারা তাদের আটক করে দিনের পর দিন নির্যাতন চালায়।
বসমা জানান, আল্লাহ যেন তাদের শাস্তি দেন। একদিন তাদের বিচার হবে। তারা আমাকে ও আমার বোনকে পাঁচদিন ধরে ধরে রেখে নির্যাতন করেছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে নর্থ দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের দখল করে নেয় আরএসএফ। প্রত্যক্ষদর্শী, মানবাধিকার সংস্থা ও বেঁচে ফিরতে পারা নারীরা বলছেন—শহরজুড়ে চালানো হয়েছে গণহত্যা, অপহরণ ও ধারাবাহিক যৌন সহিংসতা।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার শহরটিকে তুলনা করেছেন ‘অপরাধস্থল’ হিসেবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এল-ফাশেরে আরএসএফ-র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল ওইসব ‘অত্যাচার’ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
চাদে পৌঁছাতে পেরেছেন এমন অনেকেই জানেন না তাদের পরিবার বেঁচে আছে নাকি নিহত হয়েছেন।
শরণার্থী জায়না ইব্রাহিম বলেন, আমার পরিবারের অনেকেই সম্ভবত আর নেই। আমার মা, চাচারা, আমার সন্তান — কেউই কোথায় আছে জানি না।
এই অঞ্চলে মাত্র একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। মানবিক সংস্থার অল্প কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী এত বিপুল শরণার্থীর জন্য প্রায় অপ্রতুল।
সে কারণেই নারীদের এই ছোট সহায়ক বৃত্ত হয়ে উঠেছে জীবনরেখা। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাতিমা ফাদুল — তিনিও সুদানের দীর্ঘদিনের শরণার্থী ও যুদ্ধ–বেঁচে ফেরা এক নারী। তিনি নারীদের উৎসাহ দিচ্ছেন নীরবতা ভেঙে বলার জন্য, যাতে ট্রমা থেকে উত্তরণের পথ খোলা হয়।
ফাদুল বলেন, সুদানি সমাজে ধর্ষণ নিয়ে নীরব থাকার চাপ থাকে। মা–বোনেরা বলেন, চুপ থাকো। কিন্তু নীরবতা মানসিক যন্ত্রণা বাড়ায়, অসুস্থ করে। তাই আমরা বলি—বলো, ন্যায়বিচার দাবি করো।
সীমিত সহায়তা পেলেও হাজারো নারী এখনও কোনো চিকিৎসা, কাউন্সেলিং বা ন্যায়বিচারের আশা ছাড়াই নিঃসঙ্গভাবে বেঁচে আছেন। বসমা, জায়না ও তাদের মতো অসংখ্য শরণার্থীর কাছে যুদ্ধ শেষ হয়নি — কারণ স্মৃতির ভেতরে এখনও আগের মতোই জ্বলছে দুঃস্বপ্নের আগুন।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক