শান্তি পরিকল্পনার খবরের মধ্যেই ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে নতুন শান্তি পরিকল্পনার খবরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকলের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের দল আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। জেলেনস্কি বর্তমানে তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরছেন। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া নতুন একটি শান্তি-চুক্তি প্রণয়ন করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হতে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন বা মস্কো—দু’পক্ষই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর টারনোপিলে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল ডেভিড বাটলার এক বিবৃতিতে জানান, সচিব ড্রিসকল এবং তার দল আজ সকালে কিয়েভে পৌঁছেছেন। এটি একটি ফ্যাক্টফাইন্ডিং মিশন, যেখানে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধশেষের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা হবে।
দলের সঙ্গে রয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল র্যান্ডি জর্জ, ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল ক্রিস ডনাহিউ, এবং সার্জেন্ট মেজর মাইকেল ওয়েইমার।
ড্রিসকল ও জর্জ হচ্ছেন জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে সফরকারী সর্বোচ্চ পর্যায়ের মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেনিস শ্মিহাল বুধবার এক্সে (টুইটার) পোস্ট করে জানান, তিনি ড্রিসকলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
দেনিস শ্মিহাল লেখেন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তির বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
দেনিস আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে।
এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা সিবিএসকে জানান, কিয়েভ সফরে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা।
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্প বিদ্যমান ফ্রন্টলাইন ধরে সংঘাত থামানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
এরই মধ্যে অ্যাক্সিওস, ফিনান্সিয়াল টাইমস এবং রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নতুন প্রস্তাবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়, অস্ত্রসজ্জা সীমিতকরণ এবং সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করার শর্ত আছে।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং পুতিনের দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ—এই ২৮ দফা প্রস্তাব তৈরিতে যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এসব প্রতিবেদনের গুরুত্ব কমিয়ে বলেন, এটি ‘অ্যাংকরেজ আত্মা’র বাইরে অতিরিক্ত কিছু নয়।
ইউক্রেন বারবার জানিয়ে আসছে—রাশিয়ার কাছে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া হবে না।
পাশাপাশি কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্ররা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সম্প্রতি বলেছেন, তাদের পূর্বশর্ত—ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ, নিরপেক্ষতা এবং কিছু ভূখণ্ড ছাড়—এখনো বহাল আছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে যে ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ জানুয়ারিতে পদ ছাড়বেন। তিনি ৩৬০ দিনের পর এই দায়িত্বে থাকার জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হওয়ায় এই সময়টাকেই বিদায়ের উপযুক্ত সময় হিসেবে দেখছেন বলে জানা গেছে।
কেলগকে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়—বিশেষত যখন ট্রাম্প প্রশাসন বারবার রাশিয়ার প্রতি নরম অবস্থান নিয়েছে বলে সমালোচিত হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক