যে কারণে শেখ হাসিনাকে ‘সহজে ফেরত’ দেবে না ভারত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো এখন দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় উত্তেজনার কারণ। ঢাকার বারবার অনুরোধের সত্ত্বেও ভারত তাকে ফেরত না পাঠানোয় সম্পর্ক আরও শীতল হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, নিকট ভবিষ্যতে নয়া দিল্লি কোনো অবস্থাতেই হাসিনাকে ঢাকায় ফেরত পাঠাতে রাজি হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিমা আখতার বলেন, গত বছরের আন্দোলনে তার কয়েকজন বন্ধু নিহত হয়েছিলেন। সেদিনের ঘটনার প্রতিকারের জন্য এই রায়কে তিনি ‘ন্যায়বিচারের সূচনা’ বলে মনে করেন। তবে তিনি চান হাসিনার ফাঁসি ঢাকাতেই কার্যকর হোক—যা এখনই সম্ভব নয়।
ভারতে নির্বাসিত হাসিনা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন
২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তখন থেকে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ক্রমশ শীতল হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হাসিনাকে ফেরত পাঠানো ভারতের ‘বাধ্যতামূলক দায়িত্ব’।
তবে ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক চরিত্রসম্পন্ন’ মামলার ব্যতিক্রম আছে। ভারতের দৃষ্টিতে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক প্রতিশোধের অংশ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে নয়া দিল্লি ‘অ্যান্টি-ইন্ডিয়া’ হিসেবে দেখে। তাই হাসিনাকে ফেরত পাঠানো তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপদজনক।
সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘কীভাবে ভারত তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে? এটা করা সম্ভব নয়।’
ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন বাস্তবতা
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা রায় ‘নোট’ করেছে এবং বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির পক্ষে থাকবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন এই উত্তেজনা কাটার সম্ভাবনা কম।
আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এ ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। নির্বাচিত সরকার এলে ভারতের পক্ষে সম্পর্ক পুনর্গঠন সহজ হতে পারে।
জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রী রাধা দত্ত বলেন, ভারতকে এখন বাস্তবতা মেনে নিতে হবে—বাংলাদেশে হাসিনার ফের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই দিল্লিকে নতুন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে হবে।
ভারতের কাছে হাসিনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
বাংলাদেশ–ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে হাসিনা ভারতকে সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে সুবিধা দিয়েছেন। তার পারিবারিক সম্পর্কও ভারতের সঙ্গে গভীর—১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ছয় বছর ভারতেই আশ্রয়ে ছিলেন।
২০২৪ সালে দেশ ছাড়ার পর আবারও দিল্লিই তার আশ্রয়স্থল হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত তাকে ফেরত পাঠালে সেটা শুধু রাজনৈতিক ঝুঁকিই নয় বরং ‘মিত্রকে বাঁচানোর নৈতিক দায়’ থেকেও সরে আসা হবে।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কি শেষ?
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, হাসিনা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকলেও ভারত হয়তো ভবিষ্যতের জন্য বড় কূটনৈতিক লাভের কথাও ভাবছে।
কুগেলম্যান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো (বিশেষত বংশীয় দল) সহজে মরে না। আওয়ামী লীগও সময় নিয়ে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। আর সে কারণেই ভারতের কাছে হাসিনা এখনও ‘দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ’।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক