দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ঘিরে ফিলিপাইনের রাস্তায় হাজারো মানুষ
বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়রের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগে জবাবদিহি দাবি করে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় বিক্ষোভে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় সময় আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) তিন দিনের এই বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশজুড়ে হাজারো বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের পর দেশটির জনগণ রাস্তায় নেমে এসে এ বিক্ষোভ শুরু করে। খবর আল জাজিরার।
পুলিশ জানায়, দুপুরের আগেই প্রায় ২৭ হাজার চার্চ অফ ক্রাইস্ট সদস্য ম্যানিলার রিজাল পার্কে জড়ো হয়। সাদা পোশাক ও দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে তারা বিকেলের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
চার্চের মুখপাত্র এডউইন জাবালা বলেন, বহু সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতিকে নিন্দা জানানোই এই তিন দিনের সমাবেশের উদ্দেশ্য।
এদিকে অন্যান্য সংগঠনও একই দিন বিকেলে কেজন সিটির পিপল পাওয়ার মনুমেন্টে পৃথক দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতিবাদের আগে ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনী সরকারকে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এই বিক্ষোভ মারকোসের চাচাতো ভাই ও সাবেক পার্লামেন্ট স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর আরও তীব্র রূপ পায়। অভিযোগে বলা হয়, এসব ব্যক্তিরা নিম্নমানের বা সম্পূর্ণ অবাস্তব ‘ঘোস্ট ইনফ্রা’ প্রকল্পে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
সাম্প্রতিক ঝড়ে দেশজুড়ে অন্তত ২৫৯ জন নিহত হওয়ার পর, জনরোষ আরও তীব্র হয়েছে। মারকোস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্রিসমাসের আগেই দোষীদের জেলে পাঠানো হবে।
ফিলিপাইনের অর্থ মন্ত্রণালয় হিসেব করে দেখেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির বন্যা-নিয়ন্ত্রণ খাতে প্রায় ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো (২ বিলিয়ন ডলার) দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে।
এক তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া ৮৬ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও ৯ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে মারকোসের সমর্থক ও বিরোধী উভয় শিবিরের রাজনীতিক রয়েছেন। এর মধ্যে আছেন সিনেট প্রেসিডেন্ট চিজ এসকুডেরো এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিনেটর বং গো। তবে সবাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মারকোস বলেছেন, রোমুয়ালদেজের বিরুদ্ধে এখনই মামলা হবে না, কারণ যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তবে তিনি যোগ করেন, কেউ তদন্তের ঊর্ধ্বে নয়… আমরা লোক দেখানো মামলা করি না; আমরা মামলা করি অপরাধীদের জেলে পাঠানোর জন্য।
মাদকবিরোধী অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুতের্তে বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হেফাজতে আছেন। তার মেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২০২৫ সালের বাজেটে বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ অনুমোদন করার জন্য মারকোসকেও জবাবদিহি করতে হবে।
কিছু প্রো-দুতের্তে সমর্থক সেনাবাহিনীকে সরকারের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও সেনাপ্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনর দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জেনারেল রোমিও আরও বলেন, পূর্ণ দৃঢ়তার সঙ্গে জনগণকে আশ্বস্ত করছি—সংবিধানবিরোধী কোনো পদক্ষেপে সামরিক বাহিনী যাবে না। আজ নয়, আগামীকাল নয়, আমার দায়িত্বকালেও নয়।
রোমিও যোগ করেন, সামরিক বাহিনী দেশের শান্তি, সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক