গাজায় সেনা পাঠালে যে সমস্যায় পড়তে পারেন আসিম মুনির
আসিম মুনির গত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান। তাকে এখন সদ্য অর্জিত ক্ষমতার এক কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। কারণ, ওয়াশিংটন ইসলামাবাদকে গাজার জন্য প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক ‘স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্সে’ সেনা পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ১৭ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন আসিম মুনির। ছয় মাসের মধ্যে এটি তাদের তৃতীয় বৈঠক হতে যাচ্ছে।
দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আরও জানিয়েছে, বৈঠকে সম্ভবত গাজার ‘স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ নিয়ে আলোচনা হবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনায় মুসলিম দেশগুলোর একটি বাহিনী গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে। এই বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি এলাকায় পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজ তদারকি করবে।
গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিরস্ত্র করার মিশন নিয়ে অনেক দেশ সতর্ক। এ ধরনের পদক্ষেপ তাদের সংঘর্ষের দিকে টেনে নিতে পারে এবং সেসব দেশের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী জনগণের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হতে পারে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান রয়টার্সকে বলেন, গাজার স্থিতিশীলতা বাহিনীতে অবদান না রাখলে ট্রাম্প রেগে যেতে পারেন। পাকিস্তানের জন্য এটি ছোট বিষয় নয়। কারণ দেশটি মার্কিন বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সাহায্য নিশ্চিত করতে ট্রাম্পের সদয় দৃষ্টিতে থাকতে চায়।
পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রসম্পন্ন একমাত্র মুসলিম দেশ। দেশটির সেনাবাহিনী যুদ্ধে পটু। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করছে। পাশাপাশি তারা চরমপন্থি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। পাকিস্তান সরকারের দাবি, এই জঙ্গিরা আফগানিস্তান থেকে দেশটিতে প্রবেশ করছে।
লেখক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনী রয়েছে। এর অর্থ মুনিরের ওপর তার সামর্থ্য প্রমাণ করার চাপ আরও বেশি। গাজায় সেনা পাঠানোসহ এসব বিষয়ে পাকিস্তানের সেনা, পররাষ্ট্র দপ্তর ও তথ্য মন্ত্রণালয় রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। হোয়াইট হাউসও মন্তব্যের অনুরোধে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার অবশ্য গত মাসে বলেছিলেন, ইসলামাবাদ শান্তি রক্ষার জন্য সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করতে পারে, তবে হামাসকে নিরস্ত্র করা ‘আমাদের কাজ নয়’।
বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পরিকল্পনার অধীনে পাকিস্তানি সেনাদের গাজায় অংশগ্রহণ পাকিস্তানের ইসলামপন্থি দলগুলোকে নতুন করে উসকে দিতে পারে। এসব দল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো আব্দুল বাসিত রয়টার্সকে বলেন, ‘গাজার বাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তা দ্রুত সমস্যা সৃষ্টি করবে। মানুষ বলবে, আসিম মুনির ইসরায়েলের নির্দেশ মেনে কাজ করছেন। কেউ যদি এটি বুঝতে না পারেন, তার জন্য তা হবে বোকামি।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক