ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণহানির পর ভিয়েতনামে ঘূর্ণিঝড় কালমেগির আঘাত
ফিলিপাইনে ব্যাপক প্রাণহানি ও বন্যার পর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কালমেগি বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভিয়েতনামে আঘাত হেনেছে। দেশটির সরকারি ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, উপকূলে ঘণ্টায় ৯২ মাইল (১৪৯ কিলোমিটার) বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
ফিলিপাইনে অন্তত ১১৪ জনের মৃত্যু এবং হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি ভিয়েতনামে প্রবেশ করে।
ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উদ্ধার তৎপরতার জন্য ২ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ছয় হাজার ৭০০টিরও বেশি যানবাহন ও সরঞ্জাম এবং ৬টি বিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
ভিয়েতনামের সরকার জানিয়েছে, প্রবল ঝড়ের কারণে ৬টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শত শত ফ্লাইট বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে।
ভিয়েতনামের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ চীন সাগরে ৮ মিটার (২৬ ফুট) পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে।
দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝড়টি বর্তমানে ডাক লাক ও জিয়া লাই প্রদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, সাতটি শহর ও প্রদেশের শতাধিক এলাকায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
ঝড়ের তাণ্ডবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বহু বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে, হোটেলের কাচের জানালা ভেঙে গেছে এবং গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে কালমেগি ভিয়েতনামের উপকূলে আঘাত হানে। মাত্র আধঘণ্টার মধ্যেই ডাক লাক প্রদেশের শতাধিক মানুষ সাহায্যের জন্য ফোন করেন। অনেকেই জানান, তাদের ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে বা তলিয়ে গেছে।
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন বৃহস্পতিবার এক অনলাইন বৈঠকে জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের বিচ্ছিন্ন এলাকায় পৌঁছাতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে কেউ খাবার, পানি বা প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া থাকবে না। কেউ যেন ক্ষুধার্ত বা ঠান্ডায় না থাকে।
এর আগে ফিলিপাইনে কালমেগি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেখানকার প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
ফিলিপাইনে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, বিশেষ করে সেবু দ্বীপসহ কেন্দ্রীয় অঞ্চলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গাড়ি ভেসে গেছে এবং পুরো শহরজুড়ে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
গত সপ্তাহ থেকেই ভিয়েতনাম টানা রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও বন্যার সঙ্গে লড়ছে। ঐতিহাসিক শহর হুয়ে ও ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত হোই আন নগরীতে নদীর পানি উপচে পড়েছে, মানুষ নৌকায় করে চলাচল করছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা নৌকা ও মাছ চাষের খামারগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের উপপরিচালক নগুয়েন সুয়ান হিয়েন সতর্ক করে বলেন, ২০১৭ সালের ড্যামরি টাইফুনের তুলনায় কালমেগি আরও শক্তিশালী। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে থাইল্যান্ডেও ঝড়ের প্রভাবে আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও নদী উপচে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক