ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে নিহত ৩, যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান ইইউয়ের
লেবাননের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় আইন আতা ও শেবা শহরে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা (এনএনএ)। এক বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও এটি ইসরায়েলের আরেকটি স্পষ্ট লঙ্ঘন।
শনিবারের (৮ নভেম্বন) আরেক হামলায় ইসরায়েলি ড্রোন দক্ষিণ লেবাননের বেন্ট জবেইল শহরে সালাহ ঘানদুর হাসপাতালের কাছে একটি গাড়িতে মিসাইল হামলা চালায়। এতে সাতজন আহত হন বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই গাড়িতে আঘাত হানে। খবর আল জাজিরার।
এরপর দিনের তৃতীয় হামলায় ইসরায়েলি ড্রোন বারাচিত এলাকায় আরেকটি গাড়িতে আঘাত হানে, এনএনএর প্রতিবেদন অনুযায়ী এতে একজন নিহত ও চারজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় বলে সংস্থার প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামলাগুলো ছিল হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে, যদিও এর কোনো প্রমাণ দেয়নি তারা।
২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের উত্তরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ইসরায়েল যতদিন লেবাননের ভূখণ্ডে দখল বজায় রাখবে ও হামলা চালাবে, ততদিন তারা নিরস্ত্র হবে না।
এদিকে, শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানায়।
ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র আনোয়ার এল আনুনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলকে জাতিসংঘের প্রস্তাব ১৭০১ এবং ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার আহ্বান জানায়।
লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েলকে ‘দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা’ এবং দক্ষিণে সেনা মোতায়েন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ করেছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন সর্বশেষ হামলাগুলোকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইরানও এই হামলাকে ‘বর্বরতা’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবারও ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণ লেবাননে অন্তত একজন নিহত ও নয়জন আহত হন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিল বলেছে, এসব হামলা বেসামরিক জনগণের জন্য হুমকি এবং লেবাননের সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি লেবাননে সামরিক অভিযান আরও জোরদারের হুমকি দিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ কঠোরতা অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে তা আরও তীব্র করা হবে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর থেকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ নাগাদ লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করবে বলে চুক্তি হলেও, হিজবুল্লাহ বলছে ইসরায়েল এই প্রক্রিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ড দখলের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক