বিপিএলে রংপুরের ‘অপ্রতিরোধ্য’ যাত্রা
এবারের বিপিএলে সবচেয়ে পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্স। বিপিএলে একবার শিরোপাও উঁচিয়ে ধরেছে তারা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে। তবে দেশের মাটিতে সাফল্য পাচ্ছে না গত কয়েক আসরে। সামনে আরেকটি বিপিএল। এবার লক্ষ্য একই—শিরোপা পুনরুদ্ধার করা। সেই লক্ষ্যে কেমন হলো রংপুরের স্কোয়াড? শক্তি-দুর্বলতা কোথায়? সেসব বিশ্লেষণ থাকছে এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য।
পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হওয়ায় দল গোছানোয় অন্যদের চেয়ে বেশি সময় পেয়েছে রংপুর। সেটিকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে তারা। নিলামের টেবিলে বসার আগেই একগাদা বিদেশি ক্রিকেটারকে নিশ্চিত করে অর্ধেকেরও বেশি দল গুছিয়ে রেখেছিল। নিলামের টেবিল থেকে বাকি কাজটা করেন রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট।
নিলামের আগেই টপঅর্ডার ব্যাটিং আর বোলিং বিভাগটা মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলে রংপুর। নজর দেয় মিডলঅর্ডার ব্যাটিংয়েও। যদিও নিলামের আগেই চূড়ান্ত করে রাখা ক্রিকেটারদের নাম ঘোষণা করা হয় নিলামের পরে।
খাজা নাফে, ডেভিড মালান, কেইল মায়ার্সদের নিয়ে টপঅর্ডার চূড়ান্ত করে রংপুর। মিডল অর্ডারে শক্তি বাড়াতে দলে ভেড়ায় নুরুল হাসান সোহান, ইখতেখার আহমেদ ও খুশদিল শাহকে। বোলিংয়ে নজর ছিল আরও বেশি। দলে ভেড়ায় মুস্তাফিজুর রহমান, সুফিয়ান মুকিম, ফাহিম আশরাফ ও আকিফ জাভেদকে।
তবে কয়েকটি শঙ্কা ছিল রংপুরের। কারণ, একই সঙ্গে চারজনের বেশি বিদেশি ক্রিকেটারকে খেলানো যাবে না একাদশে। পাশাপাশি আইএল টি-টোয়েন্টি আর পাকিস্তান দলের সিরিজের কারণে রংপুরের সবগুলো বিদেশি ক্রিকেটারদের এক সঙ্গে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। সেই চিন্তাও করে রেখেছে রংপুর। একই সঙ্গে মিডলঅর্ডার আর ফিনিংশের যতটুকু বাকি ছিল, নিলামের টেবিল থেকে সেগুলোও পূরণ করেছে রংপুর।
প্রথম ডাকেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক লিটন দাসকে দলে নিয়ে টপঅর্ডারকে সর্বেসর্বা রংপুর রাইডার্স। এরপর নজর দেয় মিডলঅর্ডারে। দলে ভেড়ায় তাওহিদ হৃদয় আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। এরপর বোলিংকে আরও বেশি নিশ্ছিদ্র করতে দলে ভেড়ায় টাইগার পেসার নাহিদ রানা, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, আব্দুল হালিম; স্পিনার রাকিবুল হাসান জুনিয়র, আলিস আল ইসলাম, মেহেদী হাসান সোহাগকে।
পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি আর অভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্টদের পরিকল্পনায় গড়া রংপুর রাইডার্স দল গঠনে কোনো ফাঁকফোঁকর রাখেনি। টপঅর্ডার, মিডলঅর্ডার, ফিনিশিং কিংবা বোলিং—কোনো বিভাগেই কমতি রাখেনি তারা। যেমন আছে বড় নাম, তেমনি আছে পারফর্মাররাও।
রংপুর রাইডার্সের আরেকটি শক্তির জায়গা অলরাউন্ডাররা। দলটিতে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার রয়েছেন, যারা যেকোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ফাহিম আশরাফ, কেইল মায়ার্স, খুশদিল শাহ, ইফতেখার রহমানরা বিপিএলের পরীক্ষিত পারফর্মার। ব্যাটহাতে ঝড় তোলার সঙ্গে সঙ্গে বলহাতেও হাতঘোরাতে পারেন তারা। যেটি বাড়তি সুবিধা দেবে রংপুরকে।
কেইল মায়ার্স দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত রংপুরের একাদশে পজিশন বদল করে টপঅর্ডারে দেখা যেতে পারে খাজা নাফে, লিটন দাস, ডেভিড মালানকে। মিডলঅর্ডারে ৪ নম্বরে তাওহিদ হৃদয়, পাঁচ নম্বরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। ৬ নম্বরে ভরসা রাখা হতে পারে অলরাউন্ডার ইখতেখার আহমেদের ওপর।
৭ নম্বর পজিশনটা নির্ধারিত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের জন্য। ৮ নম্বরে দেখা যেতে পারে অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফের ওপর। স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবে পেসার নাহিদ রানা, আলিস আল ইসলামকে। মুস্তাফিজ দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে একাদশে দেখা যেতে পারে।
রংপুর রাইডার্সের স্কোয়াড
দেশি ক্রিকেটার : নুরুল হাসান সোহান, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, নাহিদ রানা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, রাকিবুল হাসান জুনিয়র, আলিস আল ইসলাম, নাঈম হাসান, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, মেহেদী হাসান সোহাগ, আব্দুল হালিম।
বিদেশি ক্রিকেটার : কেইল মায়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ডেভিড মালান (ইংল্যান্ড), খাজা নাফে (পাকিস্তান), সুফিয়ান মুকিম (পাকিস্তান), ফাহিম আশরাফ (পাকিস্তান), ইখতেখার আহমেদ (পাকিস্তান), খুশদিল শাহ (পাকিস্তান), আকিফ জাভেদ (পাকিস্তান), ইমিলিও গে (ইতালি), মোহাম্মদ আখলাক।

নাজমুল সাগর