ঢাকা টেস্ট
আয়াল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় ম্যাচ। দেশের প্রথম ক্রিকটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি করে কিংবদন্তিদের পাশে নাম লেখালেন তিনি। সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে তাইজুল ইসলাম দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির হলেন। এরপর ২১৭ রানের বড় ব্যাবধানে জয় পেল টাইগাররা। সিলেট টেস্ট জয়ের পর ঢাকা টেস্ট জয়ে আয়ারল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা টেস্টের পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল ৪ উইকেটের। দ্বিতীয় সেশনের মধ্যেই আইরিশদের ২৯১ রানে আটকে দিয়ে সেই কাজটা সফলভাবেই করেছে টাইগাররা। বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ২১৭ রানে।
টেস্টের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ৬৮তম ওভারে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ৫৩ বলে ৩ চারে ২১ রান করেন ম্যাকব্রাইন।
ম্যাকব্রাইনের উইকেটটি ছিল তাইজুলের ক্যারিয়ারের ২৫০ তম উইকেট। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইল ফলক স্পর্শ করলেন তাইজুল।
এরপর জর্ডান নিলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আগের দিন ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা কার্টিস ক্যাম্ফার। প্রথম সেশনেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ক্যাম্ফার। ৮২ তম ওভারে নিলকে বোল্ড করে ক্যাম্ফার-নিলের ৪৮ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন নিল।
এদিন মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ৯৩ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ করে ২৬৩ রান। ৬৩ রানে অপাজিত ছিলেন ক্যাম্ফার আর ১৮ রানে গ্যাভিন হোয়ে।
মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি আইরিশরা। তবে ক্যাম্ফার-হোয়ে মিলে ৫০ রানের জুটি গড়েন। এরপরই বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ পরপর দুই বলে তুলে নেন দুই উইকেট।
১১৪ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হোয়েকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান মুরাদ। তার ব্যট থেকে এসছে ৩৭ রান। এরপর ওভারের তৃতীয় বলে হামফ্রিসকে বোল্ড করেন তিনি। আউট হয়ে ফেরার আগে রানের খাতাই খুলতে পারেননি এই আইরিশ ব্যাটার। ২৫৯ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্যাম্ফার।
গতকাল চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৫৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান। এর আগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল মুমিনুল-মুশফিকের ১৬৭ বলে ১২৩ রানের জুটিতে ৫০০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা মুমিনুল ৮৭ রানে আউট হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৯৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। পাহাড়সম ৫০৯ রানের লক্ষ্যে আইরিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ।
শততম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ১০৬ রানের অনবদ্য ইনিংস।
ঢাকা টেস্ট জিততে হলে আইরিশদের গড়তে হতো বিশ্বরেকর্ড। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ডটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ক্যারিবীয়রা।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশর স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে একের পর এক পরাস্ত হয়েছেন আয়অর্যান্ডের ব্যাটারা। আইরিশ ব্যাটারদের বিপক্ষে দাপটের সঙ্গে শুরুটা করেন তাইজুল।
দ্বিতীয় সেশনে আয়ারল্যান্ডের ওপেনার অ্যান্ডি বালবার্নিকে ফিরিয়ে সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তাইজুল। টেস্টে সাকিবের উইকেট ছিল ২৪৬টি।
লক্ষ্য তাড়ায় নামা আইরিশদের প্রথম দুই উইকেটই নেন তাইজুল। ২৬ রানে দুই ওপেনারকে হারায় আয়ারল্যান্ড। আইরিশ দুই ওপেনার অ্যান্ডি বালবার্নিকে ১৩ আর পল স্টার্লিং ৯ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি।
এরপর পর ৫১ রানের জুটি গড়েন টেক্টর ও কারমাইকেল। ১৯ রান করা কারমাইকেলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সেই জুটি ভাঙেন মুরাদ।
এরপর তৃতীয় সেশনে কার্টিস ক্যাম্ফার- হ্যারি টেক্টর বড় জুটি গড়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে৫০ রান করা ক্যাম্ফারকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ।
দুই স্পিনারের পর এবারের আইরিশদের ব্যাটিংয়ে আঘাত হানেন পেসার খালেদ আহমেদ। ৩৭ তম ওভারের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লরকান টাকারকে ফেরান ৭ রানে।
এরপর ৪৯তম ওভারে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে স্টিফেন ডোহেনিকে আউট করেছেন তাইজুল। ৫২ বলে ১ ছয়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ রান।
এর আগে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর প্রথম ইনিংসে ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫ রানে আইরিশদের গুটিয়ে দেয় টাইগাররা। এতে প্রথম ইনিংসে ২১১ রানের বড় লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৪১.১ ওভারে ৪৭৬/১০ (জয় ৩৪, সাদমান ৩৫, মুমিনুল ৬৩, শান্ত ৮, মুশফিক ১০৬, লিটন ১২৮, মিরাজ ৪৭, তাইজুল ৪, মুরাদ ১১, ইবাদত ১৮*, খালেদ ৮; নিল ১১-১-৪৭-০, ক্যামফার ১০-০-৩২-০, ম্যাকব্রাইন ৩৩.১-৩-১০৯-৬, হামফ্রিস ৫০-৫-১৫১-২, হোয় ৩৪-৩-১১৫-২, টেক্টর ৩-০-১০-০)
আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫/১০ (বালবার্নি ২১, স্টার্লিং ২৭, কারমাইকেল ১৭, টেক্টর ১৪, ক্যাম্পার ০, টাকার ৭৫*, ডোহেনি ৪৬, ম্যাকব্রাইন ০, নিল ৪৯, হোয়ে ৪, হাফফ্রিস ৪; ইবাদত ১২-১-৪৭-১, খালেদ ৮-০-৩৯-২, তাইজুল ৩৫.৩-৬-৭৬-৪, মুরাদ ২১-৩-৫৩-২, মিরাজ ৯-১-৩৮-১, মুমিনুল ৩-১-৫-০)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৯ ওভারে ২৯৭/৪ ডিক্লেয়ার ( জয় ৬০, সাদমান ৭৮, শান্ত ১, মুমিনুল ৮৭, মুশফিক ৫৩*; নিল ৯-১-৪৮-১, হামফ্রিস ১৫-০-৫৪-০, ম্যাকব্রাইন ২৬-২-৮২-১, হোয়ে ১৭-০-৮৪-২, টেক্টর ২-০-১২-০)
আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ১১৩.৩ ওভারে ২৯১/১০ ( বালবার্নি ১৩, স্টার্লিং ৯, কারমাইকেল ১৯, টেক্টর ৫০, ক্যাম্ফার ৭১*, টকার ৭, ডোহেনি ১৫, ম্যাকব্রাইন ২১, নিল ৩০, হোয়ে ৩৭, হামফ্রিস ০ ; ইবাদত ১১-৩-২৯-০, খালেদ ১২-০-৪৫-১, তাইজুল ৪০-৭-১০৪-৪, মুরাদ ২২.৩-১১-৪৪-৪, মিরাজ ২৭-১১-৪৯-১, মুমিনুল ১-০-২-০)
ফল : বাংলাদেশ ২১৭ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম
সিরিজ সেরা : তাইজুল ইসলাম
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী

স্পোর্টস ডেস্ক