সংশোধিত শ্রম আইন ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি পুনর্বিবেচনার আহ্বান
শ্রম আইন সংশোধন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি- এসব কোনো স্বল্পমেয়াদী বিষয় নয়। এসব সুদূরপ্রসারী নীতিগত ইস্যু। যার প্রভাব আজকের প্রজন্ম নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর ফল ভোগ করবে- এমন মন্তব্য করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি স্থিতিশীল ও উন্নত অর্থনীতি উপহার দিতে, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে উৎপাদনমুখী সব শিল্পের বাস্তব চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাস্তবতা বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত, ইতিবাচক এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্স নুরুল কাদের অডিটরিয়ামে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি এসব কথা বলেন।
পোশাক শিল্পসহ দেশের সব উৎপাদনমুখী শিল্প বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ‘বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ, সেই সঙ্গে উৎপাদনমুখী শিল্পখাত এবং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য জরুরি সাম্প্রতিক ইস্যু (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ইত্যাদি) নিয়ে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
আরও পড়ুন : নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবে বিজিএমইএ-এশিয়া ফাউন্ডেশন
গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে শুল্ক মোকাবিলা করছি। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার, গত বছরের ডিসেম্বর হতে ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ বৃদ্ধি, গ্যাস ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, ২০২৩ থেকে রপ্তানি প্রণোদনা ৬০ শতাংশ হ্রাস প্রভৃতি কারণে শিল্পে পরিচালন ব্যয় লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এই সব কিছুর ওপর সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর বন্দরের সেবার বিপরীতে মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরকম একতরফা সিদ্ধান্ত শিল্প ও অর্থনীতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় ৪০ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে মাশুল বাড়ানো হয়নি। এখানে একটি স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার বিপরীতে ডলারে মাশুল আদায় করে থাকে। যেখানে ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ২৯ টাকা ৮৯ পয়সা, বর্তমানে তা ১২২ টাকার বেশি। অর্থাৎ মাশুলের হার অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের এই অবমূল্যায়নের কারণে আমরা উদ্যোক্তারা টাকার অংকে বর্ধিত হারে মাশুল প্রদান করে আসছি, যা গত ৪০ বছর ধরে কার্যত ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কখনোই লোকসান করেনি জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, এটি একটি ধারাবাহিকভাবে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এটির মুনাফা অর্জন বেড়েই চলেছে। এটি একটি সরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠান। এর লক্ষ্য কখনোই মুনাফা অর্জন হতে পারে না। তারপরও আমদানি-রপ্তানিকারীদের উদ্বেগ সত্ত্বেও কেন চার্জ বৃদ্ধি করা হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাস্তবতা হলো, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যে বন্দরগুলো ব্যবহার করে, সেগুলোর তুলনায় আমাদের বন্দর একদিকে যেমন ব্যয় বহুল, অন্যদিকে তেমনই সবচেয়ে কম দক্ষ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৪০৩টি কন্টেইনার পরিবাহী সমুদ্রবন্দরের মধ্যে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৩৫৭। সার্বিকভাবে আমাদের ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে সবচেয়ে বেশি দরকার হলো সব ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুন : বিজিএমইএ-ইন্টারটেক বৈঠক : পোশাক শিল্পে টেকসই উন্নয়ন ও সহযোগিতার অঙ্গীকার
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ মসৃণ রাখার জন্য প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দিন। জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সংকটের সমাধান করুন, কাস্টমস ও এনবিআর প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণ করুন, বিনিয়োগ ও ব্যবসাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উন্নত অবকাঠামো, উন্নত লজিস্টিক নিশ্চিত করুন, স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়নের ব্যবস্থা করুন।

নিজস্ব প্রতিবেদক