পিছিয়ে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সাময়িকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এই বিলম্ব হচ্ছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি মিডিয়া সেল থেকে এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মিডিয়া সেলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এখনও না পৌঁছানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এটি শনিবার পৌঁছাতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা যদি যাত্রার জন্য উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে, তাহলে ইনশাআল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।’
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত।
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে যাবেন হেলিকপ্টারে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হচ্ছে
এদিকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জুবাইদা রহমানের আজ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে ফিরতে পারেন। তবে সব কিছু মিলিয়ে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা সন্ধ্যা নাগাদ গড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন সিভিল এভিয়েশন ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন : ঢাকার পথে জুবাইদা রহমান
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী হবেন। তারা হলেন---খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব তুলে ধরে সরকারি ডকুমেন্টারি প্রকাশ
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও চোখের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ নভেম্বর তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা টানা এক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত আছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমেরিকা (জনস হপকিন্স), ইউকে (লন্ডন ক্লিনিক) এবং চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ মেডিকেল টিমের অধীনে তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন : যেসব সুবিধা রয়েছে কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে
গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। একইদিন বিএনপি চেয়ারপাসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান। রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
এদিকে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় আজ শুক্রবার সারা দেশে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা করবে বিএনপি। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক