যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, ছয় সপ্তাহে নিহত ৫৮২
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ছয় সপ্তাহে উদ্ধার করা মৃতদেহের সংখ্যা এখন ৫৮২ জনে পৌঁছেছে। এছাড়াও বোমা বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও ৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ এর ওপারে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বানি সুহেইলায় ড্রোন হামলায় নিহত হন।
এছাড়াও, অঞ্চলটির নাগরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র বিস্ফোরণে উত্তর গাজা শহরে একজন ফিলিস্তিনি শিশুও নিহত হয়েছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, আরও বেশ কয়েকজন শিশু আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আল জাজিরার তারেক আবু আযজুম গাজা উপত্যকা থেকে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা সারা দিন অব্যাহত ছিল। উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশে কামান, বিমান হামলা ও হেলিকপ্টার হামলার খবর পাওয়া গেছে।
আবু আযজুম আরও বলেন, ইয়েলো লাইনের বাইরেও ব্যাপক ইসরায়েলি আক্রমণ চলছে, যার ফলে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, পরিবারের সংগৃহীত সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় যে ‘গাজার এলাকাগুলো ধ্বংস করার ও বাফার জোন তৈরি করার একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা চলছে, যা এই এলাকাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।’
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মধ্য গাজায় পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো মাগাজি ক্যাম্পে তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে একই পরিবারের আট সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
হামাসের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ঘোষণা করেছে, তারা গাজার মধ্যাঞ্চলের নুসিরাত শিবিরে একজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার করেছে। যদি মৃতদেহটি শনাক্ত হয়, তবে চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলকে এই বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিতে হবে।
এছাড়াও সোমবার জাতিসংঘের সাহায্য কাঠামোর সমান্তরালে পরিচালিত মার্কিন-সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ গাজায় তাদের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটি অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির বিধানগুলোকে তাদের প্রত্যাহারের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিতরণ পয়েন্টের আশেপাশে ইসরায়েলি বাহিনী ও বিদেশি ঠিকাদারদের গুলিতে ২০২৫ সালের মে থেকে কমপক্ষে ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে সোমবার রাতভর অভিযান জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ১৬ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, গত দুই বছরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কমপক্ষে এক হাজার ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক