ইরাকের সংসদ নির্বাচনের পর কী ঘটবে?
ইরাকে নতুন সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকাল শুরু হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ইরাকের ভবিষ্যৎ সরকার গঠন প্রক্রিয়া এবং ওয়াশিংটন ও তেহরানের আঞ্চলিক ভারসাম্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এএফপির।
সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া
ইরাকের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ ও জটিল। প্রথমে ইরাকের সুপ্রিম কোর্টকে নির্বাচনের ফলাফল অনুমোদন করতে হবে। এরপর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের জন্য ডাকা হবে, তাদের মধ্যে থেকে প্রথা অনুযায়ী সুন্নি সম্প্রদায়ের একজন সদস্যকে স্পিকার নির্বাচন করতে হবে।
তাদের প্রথম সভার ৩০ দিনের মধ্যে আইন প্রণেতাদের অবশ্যই দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে, যিনি অবশ্যই একজন কুর্দি হবেন এবং দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ১৫ দিনের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। এই প্রধানমন্ত্রীকে সাধারণত নির্বাচন পরবর্তী জোটের মাধ্যমে গঠিত বৃহত্তম শিয়া ব্লক কর্তৃক মনোনীত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার গঠন করে এক মাসের মধ্যে তাকে আস্থা ভোটের জন্য সংসদে উপস্থাপন করতে হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা অবসানে সিনেটে বিল পাস
তবে এই প্রক্রিয়াগুলো প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক কলহের কারণে প্রায়শই সময়সীমা মিস হয়ে যায় এবং অস্থিরতা তৈরি হয়।
সরকার গঠন : জোটের জটিল সমীকরণ
প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা ও সরকার গঠন হলো নির্বাচন পরবর্তী সবচেয়ে কঠিন প্রক্রিয়া। ইরাকের পার্লামেন্টে কোনো একক দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না। তাই পরবর্তী নেতা নির্বাচিত হন সেই জোটের মাধ্যমে যা সবচেয়ে বেশি মিত্র দল আকর্ষণ করে বৃহত্তম ব্লকে পরিণত হতে পারে।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে ‘শাটডাউন’ অবসান, এরপর কী?
২০২১ সালে প্রভাবশালী শিয়া ধর্মগুরু মোকতাদা সদরের ব্লক সংসদে সবচেয়ে বড় বিজয়ী হলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে ছিল। সরকার গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সংসদ থেকে সরে আসেন। পরবর্তীতে ইরানপন্থি গোষ্ঠী ও উপদলগুলোর বৃহত্তর ব্লক সমন্বয় কাঠামোর ছত্রছায়ায় একত্রিত হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানীকে ক্ষমতায় আনে।
আঞ্চলিক প্রভাব : ইরান বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকেও তার পূর্বসূরির মতো ইরাকের দুই প্রধান মিত্র— ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর থেকে ইরান তার শিয়া মিত্রদের বাগদাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখেছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তেহরান ইরাকি রাজনীতিতে একটি বড় প্রভাব বিস্তার করেছে, যেখানে তারা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও সমর্থন করে।
বিশ্লেষক হামজেহ হাদাদ অবশ্য বলেছেন, ২০০৩ সাল থেকে ‘ইরানিরা সবচেয়ে দুর্বল’। তা সত্ত্বেও তেহরান ইরাকে তার প্রভাব বজায় রাখতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং ইরাকি বাজারকে তার পণ্যের জন্য উন্মুক্ত রাখতে আগ্রহী। তবে ইরানিরা জানে, ইরাকে খুব বেশি জনসাধারণের হস্তক্ষেপ দেখানো তাদের জন্য ভালো হবে না।
আরও পড়ুন: বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ মামলার হুমকি ট্রাম্পের
অন্যদিকে, ওয়াশিংটন বিপরীতটি চায়- ইরানের প্রভাবকে পঙ্গু করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করার জন্য ইরাকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ইরাকি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটি নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরানের ক্ষমতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। মঙ্গলবারের ভোটের পরেও এই কৌশল বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাদাদ বলেন, যদিও ইরান দুর্বল, এটি নমনীয় হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইরানকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া ইরাকি নেতাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক