ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা, যা দেখলেন বিবিসির সাংবাদিক
গাজা সিটির উপকণ্ঠে উঁচু বাঁধের ওপর থেকে তাকালে বোঝা যায়, যুদ্ধ এই ভূখণ্ডকে কীভাবে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। মানচিত্রে যে গাজা ছিল, মানুষের স্মৃতিতে যে শহর ছিল — এখন তা কেবল ধ্বংসস্তূপের একরঙা প্রান্তর। বেইত হনুন থেকে গাজা সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভাঙাচোরা কংক্রিটের সাগর ছাড়া আর কিছুই নেই।
যুদ্ধের প্রথম দিকে এই অঞ্চলটি ছিল ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর প্রবেশের অন্যতম স্থান। এরপর হামাসের পুনর্গঠনের কারণে ইসরায়েলি বাহিনী একাধিকবার ফিরে আসে এখানে।
ইসরায়েলিরা সংবাদমাধ্যমগুলোকে স্বাধীনভাবে গাজা থেকে সংবাদ পাঠানোর অনুমতি দেয় না। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ইসরায়েলি সেনারা বিবিসিসহ কয়েকজন সাংবাদিককে সীমিত সময়ের জন্য দখলকৃত এলাকার ভেতরে নিয়ে যায়। তবে এই সফরটি ছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো ফিলিস্তিনির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ধ্বংস নয়, বরং সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই টানেল শ্যাফট, বিস্ফোরক বা স্নাইপার পজিশন ছিল।’
সেনা মুখপাত্র জানান, ওই এলাকায় একাধিক জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ইটাই চেনের মরদেহও রয়েছে, যা গত সপ্তাহে হামাস ফেরত দিয়েছে।
বর্তমান যুদ্ধবিরতি প্রায় এক মাস ধরে কার্যকর থাকলেও, ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি তারা এখনও হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ‘প্রায় প্রতিদিনই’ সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল শত শতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে আরও ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
শোশানি বলেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন শান্তি পরিকল্পনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ‘হামাস যতদিন হুমকি হিসেবে থাকবে, ইসরায়েল ততদিন অবস্থান করবে।’
পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গঠিত ফিলিস্তিনি কমিটির কাছে, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা থাকবেন।
তবে ইসরায়েলি মুখপাত্রের দাবি, হামাস নিরস্ত্র হওয়ার বদলে আরও অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং গাজার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলি এ মুখপাত্র বলেন, ‘হামাস মানুষকে হত্যা করছে, যাতে সবাই বুঝতে পারে কে গাজার প্রকৃত মালিক। আমরা আশা করি এই চুক্তির চাপ হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করবে।’
ইসরায়েলি বাহিনী সাংবাদিকদের দেখিয়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা ‘বিরাট টানেল নেটওয়ার্ক’ — যা তারা বলছে, ‘একটি মাকড়সার জালের মতো জটিল।’
অবস্থা এখন এক অনিশ্চিত স্থবিরতায়। যুক্তরাষ্ট্র শান্তির পথে অগ্রসর হতে চাপ দিচ্ছে এবং জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যেখানে দুই বছরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নেবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করবে।
তবে প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো অস্পষ্ট — কোন দেশ সেনা পাঠাবে, কখন ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার হবে, কিংবা নতুন প্রশাসন কীভাবে গঠিত হবে, তা কেউ জানে না।
ধ্বংসস্তূপে ভরা গাজা, ট্রাম্পের বিনিয়োগ পরিকল্পনার লক্ষ্যবস্তু, যেখানে প্রশ্ন শুধু যুদ্ধ থামানো নয়, বরং গাজার মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক