৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত সামিয়া, সহিংসতায় শতাধিক নিহতের আশঙ্কা
তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান বিপুল ভোটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে ভয়াবহ সহিংসতা ও অস্থিরতা চলছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যাকব মওয়ামবেগেলে ঘোষণা করেন, শাসক দল চামা চা মাপিনদুজি (সিসিএম) এর প্রার্থী সামিয়া সুলুহু ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টােবর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৩ কোটি ১৯ লাখ ভোট পান তিনি। ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৮৭ শতাংশ। খবর বিবিসির।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত ও শত শত আহত হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার সহিংসতার ব্যাপ্তি ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে এবং অশান্তি দমনে সারাদেশে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।
বিরোধী দল চাদেমা জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ‘কমপক্ষে ৫০০ জন নিহত হয়েছেন’— যার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তানজানিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জাঞ্জিবারে শাসক দল সিসিএমের প্রার্থী হুসেইন মুইনি প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তবে বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করেছে, সেখানে ‘বড় ধরনের ভোট জালিয়াতি’ হয়েছে।
রাজধানী দার এস সালামসহ বিভিন্ন শহরে শুক্রবারও (৩১ অক্টােবর) ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তরুণদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে তারা প্রেসিডেন্ট সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে, পুলিশ ও ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়। সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামেনি। শনিবার সকালে তুলনামূলক শান্ত অবস্থা বিরাজ করলেও পুরো শহরে সেনা ও পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার মূল বিরোধী নেতাদের হয়রানি করে গণতন্ত্রকে দমিয়ে রেখেছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তুনদু লিসু রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক, অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী লুহাগা ম্পিনা মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তানজানিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিক্ষোভে প্রাণহানির খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি সকল পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন সহিংসতা আরও না বাড়ে।’
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নরওয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার ফলে বড় ধরনের প্রাণহানির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
নির্বাচনের আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছিল, তানজানিয়ায় বিরোধী নেতাদের ওপর অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের মতো ঘটনা বেড়েছে। তবে সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিল, নির্বাচন ‘স্বাধীন ও সুষ্ঠু’ হবে।
সামিয়া সুলুহু হাসান ২০২১ সালে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলি-এর মৃত্যুর পর তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন। এবার তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিচ্ছেন— তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনের সহিংসতা ও বিরোধীদের দমন তানজানিয়ার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক