গাজায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত, আরও এক জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করল হামাস
 
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হামাস আরেকজন মৃত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে। চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে, যা অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টােবর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থা ওই মরদেহের কফিন গ্রহণ করেছে এবং তা গাজায় অবস্থানরত সেনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খবর আল জাজিরার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ২৮ জন মৃত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে হামাস।
এ ছাড়া বেঁচে থাকা ২০ জন জিম্মিকে ১৩ অক্টোবর মুক্তি দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক এই মরদেহ ফেরতের পরও নিহত জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন—যদি হামাস অবশিষ্ট মরদেহগুলো দ্রুত খুঁজে না পায়, তবে যুদ্ধবিরতি স্থগিত করতে হবে।
হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরামের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাস ভালোভাবেই জানে মৃত প্রতিটি জিম্মির মরদেহ কোথায় আছে। আমরা ইসরায়েল সরকার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ করছি—সব জিম্মির মরদেহ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত চুক্তির পরবর্তী ধাপে না যেতে।’
হামাসের আলোচক খালিল আল-হাইয়া শনিবার (২৫ অক্টােবর) বলেন, গাজার ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হওয়ায় অনেক মরদেহের অবস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘যারা মরদেহগুলো কবর দিয়েছিল, তাদের অনেকে যুদ্ধে নিহত হয়েছে বা স্থানগুলো ভুলে গেছে।’
এরপর ইসরায়েল একটি মিসরীয় প্রযুক্তিগত দলকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যারা খননযন্ত্র ও ট্রাক ব্যবহার করে মরদেহ উদ্ধারের কাজে সহায়তা করছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সোমবার (২৭ অক্টােবর) গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আটজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৫২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এটিকে যুদ্ধবিরতির ভঙ্গ হিসেবে দেখি না। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে যদি তাৎক্ষণিক হুমকি থাকে। সব মধ্যস্থতাকারী এ বিষয়ে একমত।’
জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর প্রায় চার লাখ ৭৩ হাজার মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে গেছেন, কিন্তু তারা এখনো ভয়াবহ মানবিক সংকটে ভুগছেন—খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের প্রধান ইউনিস আল-খাতিব নরওয়েতে এক বৈঠকে বলেন, ‘মানুষকে পুনর্গঠন করা ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের চেয়েও কঠিন। গাজার মানুষের বছরের পর বছর মানসিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে।’
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজনীয় মানুষের সংখ্যা চার লাখ ৮৫ হাজার থেকে বেড়ে ১০ লাখের বেশি হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, গাজা গত দুই বছরে ‘শিশুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হয়ে উঠেছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই যুদ্ধে প্রতিদিন একটি শ্রেণিকক্ষের সমান শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। যারা বেঁচে আছে, তাদের মনে এই ক্ষত বছরের পর বছর থেকে যাবে।’

 
                   এনটিভি অনলাইন ডেস্ক
                                                  এনটিভি অনলাইন ডেস্ক
               
 
 
 
