‘জেন জি’ বিক্ষোভে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

‘জেন জি’ বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দেশটির বিরোধী দল ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্বজুড়ে ‘জেন জি’ (তরুণ প্রজন্ম) বিক্ষোভের মুখে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
সংসদে বিরোধী দলের নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়িকো রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রোববার (১২ অক্টোবর) রাজোয়েলিনা মাদাগাস্কার ত্যাগ করেছেন। যদিও তাঁর বর্তমান অবস্থান অজানা, তবে একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন। ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তাঁর একটি চুক্তি হয়েছিল।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এই বিক্ষোভ শুরু হয়, কিন্তু দ্রুত তা দুর্নীতি, দুর্বল শাসন ও মৌলিক পরিষেবার অভাবসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহে পরিণত হয়। নেপাল ও মরক্কোর মতো দেশগুলোতেও সম্প্রতি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, যার প্রতিফলন দেখা গেল মাদাগাস্কারে।
২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলে সহায়তাকারী একটি অভিজাত ইউনিট- ক্যাপস্যাট রাজোয়েলিনাকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে দিলে তিনি ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সপ্তাহান্তে ক্যাপস্যাট ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয় ও তাদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। এরপর তারা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেয় ও একজন নতুন সেনাপ্রধানও নিয়োগ করে।
বর্তমানে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনকারী আধাসামরিক বাহিনীর একটি অংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জেন্ডারমেরির (সশস্ত্র পুলিশ) নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে।
সোমবার রাজধানীর প্রধান চত্বরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে ‘প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। হোটেল কর্মী আদ্রিয়ানারিভোনি ফ্যানোমেগ্যান্টসোয়া নামে এক বিক্ষোভকারী জানান, ১৬ বছরে প্রেসিডেন্ট কেবল নিজেদের ধনী করেছেন, যেখানে সাধারণ মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে। তিনি বলেন, যুবসমাজ, জেন জি, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। জনগণের রোষের মুখে থাকা সিনেটের সভাপতিকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ও জিন আন্দ্রে এনড্রেমাঞ্জারিকে অস্থায়ীভাবে সিনেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিনেটের নেতা এই পদ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, মাদাগাস্কারের প্রায় তিন কোটি মানুষের বসবাস। যার মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে ও এখানকার অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের গড় বয়স ২০ বছরেরও কম।