প্রেসিডেন্টের পলায়নের পর দায়িত্বে আসছেন কে?
মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত তরুণ বিক্ষোভকারীদের কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনের পর একটি অভিজাত সেনা ইউনিট তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায় ও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। এই উত্তেজনার মধ্যেই সংসদ রাজোয়েলিনাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে যখন সংসদ অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিচ্ছিল, তখনই রাজোয়েলিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ডিক্রি পোস্ট করে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু বিরোধীরা তাঁর সেই ডিক্রি প্রত্যাখ্যান করে।
রাজোয়েলিনা এক্স-এ বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের জাতির মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয়।’
পরবর্তী দায়িত্বে আসছেন কে?
দেশটিতে এখন কোনো স্পষ্ট নেতা নেই। ক্ষমতায় কে আসছেন, তা নিয়ে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা তাঁর পদ ‘ছেড়ে দিয়েছেন, আর এই অভিযোগে তাঁকে সরানোর জন্য তারা অভিশংসনের ভোট শুরু করে। মঙ্গলবার বিকেলে সংসদ সেই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলেও রাজোয়েলিনা এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি এবং প্রেসিডেন্টের পদও ছাড়েননি।
দেশের সেনা ইউনিট ক্যাপস্যাট রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল দখল করে নেওয়ার পর সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়েছেন। এর ঠিক পরেই মঙ্গলবার বিকেলে যখন সংসদ তাঁকে সরানোর চেষ্টা করছিল— তখনই ক্যাপস্যাট ঘোষণা করে যে, তারা এখন দেশের দায়িত্ব নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহুর্তে ক্ষমতার আইনি ভিত্তি স্পষ্ট নয়। যদিও আইনত রাজোয়েলিনা এখনও প্রেসিডেন্ট, কিন্তু ক্যাপস্যাটের ক্ষমতা দখলের ঘোষণার ফলে সংসদ ভেঙে দেওয়ার তাঁর সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। এই পরিস্থিতি রাজোয়েলিনা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চরম চাপ ও টানাপোড়েন নির্দেশ করছে।
বিক্ষোভের কারণ
বিক্ষোভের সূচনা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর, যখন রাজধানী আন্তানানারিভোর রাস্তায় ‘জেন জি মাদাগাস্কার’ নামে একটি তরুণ আন্দোলনের নেতৃত্বে শত শত বিক্ষোভকারী নেমে আসে।
বিক্ষোভের প্রাথমিক কারণ ছিল দীর্ঘদিনের পানি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তবে এটি দ্রুতই ব্যাপক দারিদ্র্য, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অভিজাতদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির প্রতি হতাশায় পরিণত হয়।
বিক্ষোভকারীরা রাজোয়েলিনার ১৫ বছরের পুরনো সরকারের অবসান ও একটি ‘মুক্ত, সমতাবাদী এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজের’ জন্য আহ্বান জানায়। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল— রাজোয়েলিনা ও তাঁর সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ, সিনেট ও সাংবিধানিক আদালত ভেঙে দেওয়া এবং দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা।
ক্ষোভ কমানোর জন্য রাজোয়েলিনা তাঁর প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন এবং আলোচনার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় যখন শনিবার দেশের বিশেষ সেনা ইউনিট ক্যাপস্যাট বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে।
রাজোয়েলিনা কে, সংকট কেন গুরুতর?
৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা ২০০৯ সালে সামরিক-সমর্থিত অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা হিসেবে প্রথম ক্ষমতায় আসেন। তিনি ২০১৯ সালে নির্বাচিত হন ও ২০২৩ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন, অধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
মাদাগাস্কারের রাজনীতিতে সামরিক সমর্থিত অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে প্রায় ১৩০ জন মারা গিয়েছিল। এই কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যাপস্যাট নেতারা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এড়াতে সরাসরি অভ্যুত্থানের ঘোষণা এড়িয়ে চলছেন এবং অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতার ভারসাম্য বর্তমানে রাজোয়েলিনার পক্ষে নেই।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক