যেভাবে করোনার সংক্রমণ বন্ধ করেছে ইতালির একটি শহর

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের দ্রুততম পদ্ধতি কী, তা নিয়ে নিশ্চিত বা স্বীকৃত কোনো পন্থা এখনো উদ্ভাবন হয়নি। তবে একেকটি দেশ বা অঞ্চল নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাতে সফল হয়েছে কেউ কেউ। ইতালির ছোট শহর ভো ইউগানেও তাদের মধ্যে একটি।
ভো ইউগানেও শহরের প্রত্যেক বাসিন্দার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না, তা জানার জন্য। উত্তর ইতালির করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী ছিলেন শহরটির বাসিন্দা। চলতি মার্চের শুরুতেই শহরটির তিন হাজার ৩০০ বাসিন্দার করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের পাদুয়া প্রদেশের শহর ভো ইউগানেও। ছোট এ শহরটি আলোচনায় আসে গত ২১ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন শহরের ৭৭ বছর বয়সী এক বাসিন্দা করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইউরোপের সেটাই ছিল করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। ওই শহরে করোনায় আক্রান্ত রোগী আরো ছিলেন। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে এরপর যে ব্যবস্থা নেয় শহর কর্তৃপক্ষ, তাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ ভাগ কমে আসে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, ভো ইউগানেও শহরে মৃত ব্যক্তির নাম আদ্রিয়ানো ট্রেভিস্যান। আদ্রিয়ানোর মৃত্যুতে গোটা ইতালিতে করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইতালির অন্য সব অঞ্চলের সঙ্গে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভো ইউগানেও শহরের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তার আগে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরের বাসিন্দাদের সবার করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। প্রথম পরীক্ষার দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফায় শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রায় ৯০ জন করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের বেশিরভাগের মধ্যেই করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। আক্রান্ত সবাইকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়।
পরীক্ষা না করা হলে যাঁরা আক্রান্ত নন বা যাঁদের মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না, তাঁদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকত। এরপর ছোট ওই শহরটি লকডাউন বা সিল করে দেওয়া হয়।
এরপর কিছুদিন আর নতুন করে কারো করোনা ধরা পড়েনি। তাতে ধরে নেওয়া হয়, শহরে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করা গেছে।
ভেনেতো অঞ্চলের গভর্নর নির্দেশ দেন, শহরের সব বাসিন্দার দুবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। একবার শহরটি যখন সারা দেশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে, তার আগে। আর দ্বিতীয় দফা প্রথম পরীক্ষার দুই সপ্তাহ পরে।
এ পদ্ধতি ব্যবহার করায় প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায়ই করোনাবাহী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইসোলেট (আলাদা করে ফেলা) করা সম্ভব হয়।
এভাবে গণহারে পরীক্ষার সুবিধা হলো, কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবে জানতে পারল, মহামারির আকারটি কেমন এবং সে অনুযায়ী তা দমনে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করল।
ইতালীয় সংবাদমাধ্যম লা রিপাবলিকা জানায়, প্রথমবার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার দুই সপ্তাহ পর দেখা গেল, সংক্রমণের হার অনেক কমে এসেছে।
শুরুতে শহরের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত ছিল। দুই সপ্তাহ পর তা নেমে আসে দশমিক ২৫ শতাংশে।
ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সার্জিও রোমাগনানি এক খোলা চিঠিতে জানান, প্রথমবার পরীক্ষা করার দুই সপ্তাহ পর ভো ইউগানেও শহরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ থেকে কমে দাঁড়ায় সাতজনে।
দক্ষিণ কোরিয়ায়ও এভাবে বড় সংখ্যায় শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়, তাতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাটা জরুরি’, যাতে আক্রান্তদের আইসোলেট করা যায়। এতে ভাইরাসটির সংক্রমণের চেইনটা ভাঙা সম্ভব হয়। তবে এখন পর্যন্ত ইতালির ওই শহরের মতো ব্ল্যাঙ্কেট টেস্ট বা সবার টেস্ট করানোর পক্ষে মত দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।