‘জয়টা যেন স্বপ্নের মতো’ ভারতের হয়ে ইতিহাস গড়ে কাঁদলেন জেমিমা
নাভি মুম্বাইয়ে এমন ঐতিহাসিক রাতের স্বপ্নই যেন দেখছিলেন জেমিমা রদ্রিগেজ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার পেছনে তার অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসটি ছিল জয়ের মূল ভিত্তি। জিততে হলে যে ভারতকে রান তাড়ায় বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো। আর সেই বিশ্বরেকর্ড হয়েছে জেমিমার বীরত্বেই।
রান তাড়ায় রেকর্ড গড়ে আবেগাপ্লুত জেমিমা বলেন, ‘গত এক মাস খুব কঠিন কেটেছে, অনেক উদ্বেগে ছিলাম। আজকের এই জয়টা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।’
গতকাল (৩০ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ড. ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস একাডেমিতে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে জয় পেয়েছে হারমানপ্রীত কৌরের দল। এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৩৩৮ রান। জবাবে ৯ বল হাতে রেখেই লক্ষ্য পার করে ফেলে ভারত।
আরও পড়ুন : রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ভারত
ম্যাচ জয়ের পর কাঁদছিলেন জেমিমা। ম্যাচে তিনি নিজের ইনিংসের কথা ভাবেননি, বরং পাহাড়সম রান তাড়া করে জয়ের কথাটাই ভেবেছেন সবসময়। আর এতেই ইতিহাস গড়ে ফেলে ভারত। তিনি বলেন, ‘আজ আমার ৫০ বা ১০০ রানের কথা ভাবিনি, আজ শুধু চেয়েছিলাম ভারত যেন জেতে।’
গ্রুপপর্বে পরপর দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে নামানো হয় তিন নাম্বারে। সেখানেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন ৫৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে। এরপর সেমিফাইনালেও একই পজিশনে নেমে করলেন বাজিমাত। সুযোগ পেয়ে যেনো সেটি ঠিকভাবেই কাজে লাগালেন এই ভারতীয় ব্যাটার। এখন সবকিছুই অবিশ্বাস্য লাগছে তার কাছে।
এই বিষয়ে জেমিমা বলেন, ‘আমি জানতাম, সুযোগ পেয়েছি কিছুটা, কিন্তু মনে হচ্ছিল সবকিছু ঈশ্বরের পরিকল্পনা। আমি বিশ্বাস করি, তুমি যদি সঠিক কাজ করো, সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে করো, ঈশ্বর আশীর্বাদ করেন। যা কিছু ঘটেছে, সবই যেন এই দিনের জন্য প্রস্তুতি ছিল। শেষ এক মাস সত্যিই খুব কঠিন ছিল। এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না, এটা সত্যিই ঘটেছে।’
জেমিমা আরো বলেন, ‘এই সফরে প্রায় প্রতিদিনই কেঁদেছি। মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না, প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগছিলাম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাদ পড়াটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি শুধু ভেবেছিলাম—যা হোক, মাঠে গিয়ে সেরাটা দেব, বাকিটা ঈশ্বরের হাতে।’
আরও পড়ুন অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটারদের শ্লীলতাহানি, ভারতীয় মন্ত্রীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়
বড় রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ভারত শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। দ্বিতীয় ওভারেই তিন নম্বরে নেমে জেমিমা প্রায় পুরো ইনিংস জুড়েই ছিলেন মাঠে। ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানে দলকে জিতিয়েছেন ৫ উইকেট হাতে রেখে, ৯ বল বাকি থাকতে। অথচ জেমিমা জানতেনও না যে এই ম্যাচে তাকে তিন নম্বরে নামানো হবে।
এই প্রসঙ্গে জেমিমা বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম পাঁচ নম্বরে নামব। গোসল করছিলাম, তখন টিম মিটিং হচ্ছিল। আমি বলেছিলাম, আমাকে পরে জানিও। মাঠে নামার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে জানতে পারি, আমি তিন নম্বরে নামব। তবে তখন নিজের ব্যাপারে ভাবিনি। এটা আমার কিছু প্রমাণের ম্যাচ ছিল না। শুধু ভারতের জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ আমরা আগেও এমন পরিস্থিতিতে হেরেছি। আমি চেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে, দলকে জেতাতে।’
সর্বশেষ ২০২২ বিশ্বকাপে বাদ পড়েন মহারাষ্ট্রের এই ব্যাটার। এটিই ছিল তার প্রথম বিশ্বকাপ। সেখানে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তার বীরত্বগাঁথা ইনিংসটা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। জেমিমা বলেন, ‘২০২২ সালের বিশ্বকাপে আমি বাদ পড়েছিলাম। এবার সুযোগ পেয়েছি, ভেবেছিলাম চেষ্টা করব। কিন্তু একের পর এক ঘটনা ঘটছিল, কিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত, পাশে এমন মানুষ ছিল যারা সবসময় বিশ্বাস রেখেছে আমার ওপর।’
ইনিংস চলাকালীন জেমিমাকে নিজের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, শুরুতে নিজেকে উজ্জীবিত রাখার জন্য কথা বলছিলেন নিজের সাথে। শেষে যখন শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন, তখন বাইবেলের একটি উদ্ধৃতি মনে করছিলেন ‘স্থির থেকো, ঈশ্বর তোমার হয়ে লড়বেন।
ইতিহাসগড়া এই জয়ের জন্য লড়ার পথে সতীর্থদের নিয়ে জেমিমা বলেন, ‘আমি ভাগ্যবতী যে, এমন সতীর্থ পেয়েছি যারা আমাকে ভরসা দিয়েছে। আমি একা কিছু করিনি।’
জয় পাওয়ার পর জেমিমা উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়েন। তবে উৎসাহ দিতে আসা সমর্থকদের ধন্যবাদ দিতেও ভোলেননি জয়ের নায়ক জেমিমা। তিনি বলেন, ‘শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। যখন দেখলাম ‘ভারত ৫ উইকেটে জয়ী’, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। নাভি মুম্বাই আমার জন্য সবসময় বিশেষ জায়গা। এর চেয়ে ভালো কিছু চাওয়ার নেই। যারা গ্যালারিতে বসে শেষ পর্যন্ত আমাদের উৎসাহ দিয়েছে, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’
আগামী রোববার নাভি মুম্বাইয়ের এই মাঠেই হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেখানে ভারতের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। নারী ক্রিকেটে এবার দেখা যাবে এক নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

স্পোর্টস ডেস্ক