এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের তিন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, এতে মুহূর্তেই ছাই হয়েছে বেশ কিছু তাজা প্রাণ ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড জনমনে প্রশ্ন— এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা।
রাজধানীর মিরপুরে রাসায়নিক গুদামে আগুন
চলতি মাসে পাঁচ দিনে ঘটে যাওয়া বড় তিনটি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রথম ভয়াবহ আগুন লাগে রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদামে। এতে ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ও একটি গার্মেন্টস এবং একটি কেমিক্যাল গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। পরে পর্যায়ক্রমে আরও সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে পাশাপাশি দুটি প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে। একটি তৈরি পোশাক কারখানা, অন্যটি রাসায়নিকের গুদাম। পোশাক কারখানাটি সাততলা বিশিষ্ট। এর চারতলায় আগুন লাগে।
চট্টগ্রামের ইপিজেডে আগুন
রাজধানীর মিরপুরের মাত্র দুদিন পর ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) আগুন লাগে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি কারখানায়। ভয়াবহ এ আগুন একদিন পর শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ইপিজেড, আগ্রাবাদ, বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টায়— ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। বিমানবন্দরের এই আগুন ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয়— নৌ-বাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা।
জানা গেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে, অর্থাৎ আট নম্বর গেটের পাশে অবস্থিত। আগুনটি লেগেছে মূলত আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে, যেখানে বিদেশ থেকে আসা পণ্যসামগ্রী রাখা হয়। আগুনে সেখানকার প্রায় সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানা গেছে, যার ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ (শনিবার) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
এতে আরও বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে সমগ্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শিগগিরই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের উৎস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা—এই রহস্য উদঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মিরপুরের রাসায়নিক গুদাম, চট্টগ্রামের ইপিজেড এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং এর পেছনের আসল কারণ কী, তা এসব কমিটির প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক