গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা, ওসি প্রত্যাহার
গণধর্ষণের একটি ঘটনায় মামলা না নিয়ে টাকার বিনিময়ে আপস ও ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে তাঁকে প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গণধর্ষণের একটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওসি শরিফুলের বিরুদ্ধে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাজশাহী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ জানান, প্রশাসনিক কারণে পবা থানার ওসিকে রাজশাহী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর পবা থানায় পরিমল কুমারকে ওসি হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি পবার ওসি শরিফুলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে একটি গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ২০ নভেম্বর নির্যাতিত মেয়েটি এসপির কার্যালয়ে হাজির হয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
সেখানে মেয়েটি তদন্ত কর্মকর্তা সুমিত চৌধুরীর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মেয়েটি তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, পিল্লাপাড়া গ্রামের রায়হানের (২৫) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রায়হান তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ২৯ মে বিকেলে নওহাটা কলেজ মোড়ে ডেকে নেয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাতে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত এলাকার এক আমবাগানে নিয়ে যায়। পরে রায়হান ফোন করে পিল্লাপাড়া গ্রামের জুয়েল, শাহীনূর রহমান ও টিকুরীপাড়া গ্রামের মেরাজকে ডেকে নেয়। আমবাগানে এসে তারা তাঁকে জোর করে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলে। এ সময় বাধা দিলে তাঁকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে গণধর্ষণ করে তার মাথার চুল কেটে দেয়। এরপর তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরে জ্ঞান ফিরলে দারুশা এলাকায় তিনি নিজেকে দেখতে পান। পরে তিনি চিৎকার করলে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে।
তদন্ত কমিটিকে মেয়েটি আরো জানান, পরের দিন সকালে তিনি মামলা করতে পবা থানায় যান। ঘটনার বিবরণ শুনে ওসি শরিফুল ইসলাম তাঁকে থানাতে বসিয়ে রাখেন। তিনি কান্নাকাটি করে এ ঘটনার বিচার দাবি করে মামলা করতে চান। কিন্তু ওসি মামলা করতে মানা করেন। এরপর দিনভর তাঁকে থানার মধ্যে আটকে রাখেন। মেডিকেল টেস্টের কথা বললেও তা করতে দেননি ওসি। ওই দিন মামলা না নিয়েই নির্যাতিত মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ওসি। মেয়েটির থানায় যাওয়ার কথা শুনে অভিযুক্তরা মামলা না করতে মেয়েটিকে নানাভাবে হুমকিও দেয়। এর পরের দিন পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। থানাতে বসেই গণধর্ষণের ঘটনা আপস করে দেন ওসি শরিফুল ইসলাম।
মেয়েটি জানিয়েছেন, ওসি তাঁকে জোর করে ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে আপসে বাধ্য করেছেন। কিন্তু পরে পুলিশের ভয়ে তিনি কোথাও আর অভিযোগ করেননি। পরে তিনি শুনেছেন, আসামিদের কাছ থেকে ওসি এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে গণধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ওসি শরিফুল ইসলামকে পুলিশের সব অপারেশনাল ইউনিট থেকে প্রত্যাহারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে পবা থানার ওসির সরকারি মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পরিদর্শক হাসমত আলী জানান, ওসি শরিফুল ইসলাম ১০ দিন ধরে ছুটিতে আছেন। তিনি ফিরলে নতুন ওসি যোগ দেবেন। কারণ, ওসি শরিফুলকে তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।

শ. ম সাজু, রাজশাহী