বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার ‘দায়িত্ব’ অনুভব করছেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণ বিকৃতভাবে প্রচার করায় বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করা তার ‘দায়িত্ব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বিবিসির প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে তার ভাষণকে ‘কেটে-ছেঁটে বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শকদের সঙ্গে ‘প্রতারণার’ অংশ। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমার ৬ জানুয়ারির ভাষণটি সম্পূর্ণভাবে বদলে ফেলেছে। এটি ছিল এক শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ভাষণ। অথচ তারা এমনভাবে সম্পাদনা করেছে যেন সেটি উসকানিমূলক বক্তব্য ছিল।’
ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসিকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করার পর এটি তার প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি বিবিসি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায়, প্রতিবেদন প্রত্যাহার না করে এবং তাকে ক্ষতিপূরণ না দেয়, তবে তিনি ১ বিলিয়ন ডলার (৭৫৯ মিলিয়ন পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করবেন।
বিবিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চিঠিটি পর্যালোচনা করছে এবং ‘উপযুক্ত সময়ে’ জবাব দেবে। বিবিসি চেয়ার সামির শাহ ইতোমধ্যেই ঘটনাটিকে ‘বিচারের ভুল’ বলে স্বীকার করেছেন।
ফক্স নিউজের অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা লরা ইনগ্রাহামের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মামলা করব। কেন নয়? তারা জনগণকে প্রতারিত করেছে এবং নিজেরাও তা স্বীকার করেছে। তাই আমার দায়িত্ব এটি করা।’
এই সাক্ষাৎকারটি সোমবার (১০ নভেম্বর) রেকর্ড করা হলেও বিবিসি-সম্পর্কিত অংশটি প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে।
বিবিসির কাছে পাঠানো আইনজীবীদের চিঠিতে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, বিবিসিকে ‘সম্পূর্ণ ও ন্যায্য প্রত্যাহার’ করতে হবে এবং ট্রাম্পের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিবিসির প্যানোরামা ডকুমেন্টারিটি ২০২৪ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রচারিত হয়েছিল। তবে সম্প্রতি ডেইলি টেলিগ্রাফে একটি ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ মেমো প্রকাশের পর বিষয়টি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করে।
মেমোতে অভিযোগ করা হয়েছিল, ডকুমেন্টারিতে ট্রাম্পের ভাষণের দুটি আলাদা অংশ ৫০ মিনিট ব্যবধান রেখে জোড়া লাগানো হয়, যা দেখে মনে হয় তিনি সরাসরি ক্যাপিটল হামলায় উৎসাহ দিচ্ছেন।
আসল ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলে যাব এবং আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব।’ কিন্তু ডকুমেন্টারিতে সেটি কেটে দেখানো হয়, ‘আমরা ক্যাপিটলে যাব... আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। এবং আমরা লড়াই করব, আমরা নরকের মতো লড়ব।’
বিতর্কের জেরে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং প্রধান সংবাদ সম্পাদক ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।
ডেভি এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বলেন, ‘আমরা ভুল করেছি এবং এর জন্য মূল্য দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের ভালো কাজই শেষ পর্যন্ত আমাদের রক্ষা করবে।’
ব্রিটিশ সরকার বলেছে, এটি ‘বিবিসির অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং সরকার কোনো চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করবে না।
এই বিতর্ক এমন সময়ে সামনে এসেছে, যখন বিবিসির রয়্যাল চার্টার ২০২৭ সালে শেষ হতে যাচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বলেছেন, নতুন চার্টার আলোচনায় বিবিসিকে ‘আধুনিক যুগের উপযোগী, জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এদিকে, রিফর্ম ইউকে দল ঘোষণা করেছে যে তারা বিবিসির সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা তাদের উত্থান-নির্ভর ডকুমেন্টারিতে আর অংশ নেবে না। দলটির অভ্যন্তরীণ ইমেইলে বলা হয়েছে, ‘বিবিসির আচরণের কারণে আমরা তাদের আর কোনো ফুটেজ ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না।’

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক