স্বাধীন ফিলিস্তিনের রোডম্যাপ ছাড়া কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না সৌদি
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ ছাড়া কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না সৌদি আরব। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকেও জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দুটি সূত্র।
তারা বলছে, ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের অবস্থান এক করতে চায় রিয়াদ, যাতে আলোচনার সময় বা পরবর্তী সময়ে কোনো বিভ্রান্তি না হয়। খবর রয়টার্সের।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জনাথন প্যানিকফ বলেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) কোনোভাবেই ফিলিস্তিনের জন্য বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ না দেখে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবেন না।
প্যানিকফ আরও বলেন, যুবরাজ সম্ভবত ট্রাম্পের কাছ থেকে একটি স্পষ্ট ও প্রকাশ্য অঙ্গীকার চান যে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেবে।
এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী হলেও, সৌদি যুবরাজের ওয়াশিংটনে সফরে এই মুহূর্তে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
দশকের পর দশক শত্রুতার পর রিয়াদ-তেলআবিব কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে এবং অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও জোরদার হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আশা করছেন খুব শিগগিরই সৌদি আরব ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এ যোগ দেবে, যেসব চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটিই এমবিএসের প্রথম ওয়াশিংটন সফর। সেই ঘটনার কারণে সৌদি যুবরাজকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
ট্রাম্প ৫ নভেম্বর এক বক্তব্যে বলেন, অনেক দেশ এখন আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দিচ্ছে, আশা করছি খুব শিগগিরই সৌদি আরবও যোগ দেবে।
তবে উপসাগরীয় সূত্র জানায়, রিয়াদ চায় নতুন কাঠামোর অধীনে আলোচনা হোক, আগের চুক্তিগুলোর সম্প্রসারণ নয়।
ইসলামের জন্মভূমি এবং পবিত্র মক্কা-মদিনার অভিভাবক সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়; এটি গভীর নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়।
আর গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযান ও ফিলিস্তিনি প্রাণহানির কারণে আরব জনমনে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব এখনো তীব্র।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মনাল রাদওয়ান বলেন, গাজা থেকে ইসরায়েলের নির্দিষ্ট সময়সীমায় প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েন ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার—এই তিনটি পদক্ষেপই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, এমবিএস-ট্রাম্প বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও বিনিয়োগ। ইসরায়েল-স্বীকৃতির মতো রাজনৈতিক সংবেদনশীল ইস্যু আলোচনাকে ছাপিয়ে না যায়, সেটাই রিয়াদের উদ্দেশ্য।
এই বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ও সৌদি নিরাপত্তা সুরক্ষা আরও জোরদার করবে।
তবে সূত্র বলছে, এটি পূর্ণাঙ্গ কংগ্রেস-অনুমোদিত চুক্তি নয়; বরং কাতারের সঙ্গে করা এক্সিকিউটিভ অর্ডারধারী চুক্তির মতো একটি কাঠামো।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সহযোগিতা ও চীনের সঙ্গে সামরিক শিল্পে রিয়াদের সম্পর্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
একই সঙ্গে সৌদি আরব উন্নত মার্কিন অস্ত্র দ্রুত ক্রয় করতে পারবে, যা অতীতে রাজনৈতিক জটিলতায় আটকে গিয়েছিল।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক