মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি রিপাবলিকানদের, কতটা সম্ভব?
নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর রিপাবলিকান নেতাদের একাংশ এখন জোহরান মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি তুলেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে হুমকি দিয়েছেন—তিনি যদি দায়িত্ব নেন, তবে নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়া হবে। খবর আল জাজিরার।
৩৪ বছর বয়সী উগান্ডায় জন্ম মামদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি নাকি নাগরিকত্বের আবেদনকালে ‘কমিউনিস্ট বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ গোপন করেছিলেন।
তবে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট জানিয়েছে, মামদানি নাগরিকত্ব অর্জনের প্রক্রিয়ায় কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস এক বিবৃতিতে বলেন, যদি মামদানি নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তবে তিনি নাগরিক নন এবং নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ারও যোগ্য নন। একজন কমিউনিস্ট এখন আমেরিকার বড় শহরের নেতৃত্বে আসছেন—এটা বিপজ্জনক।
ওগলস যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলকে মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার তদন্তের আহ্বান জানান।
আরেক রিপাবলিকান নেতা র্যান্ডি ফাইন দাবি করেন, মামদানি মাত্র আট বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন—যা নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত পূরণ করে না। তবে সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী মামদানি ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন।
নাগরিকত্ব বাতিল কতটা সম্ভব?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করা একটি অত্যন্ত বিরল ও কঠিন প্রক্রিয়া।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো তথ্য গোপন করেছেন যা নাগরিকত্বের ফলাফল বদলে দিতে পারত। মামদানির ক্ষেত্রে এমন প্রমাণ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা সাধারণত নাৎসি যুদ্ধাপরাধী বা সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে।
‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হওয়া অপরাধ নয়
রিপাবলিকান নেতারা অভিযোগ করেছেন, মামদানি নাগরিকত্বের আবেদনে নিজের ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা (ডিএসএ) সদস্যপদ উল্লেখ করেননি। তারা একে ‘কমিউনিস্ট সংগঠন’ বলে দাবি করেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএসএ কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন।
ম্যাককিনি বলেন, ডিএসএ সদস্যপদ গোপন করলেও সেটা প্রতারণা নয়, কারণ এটি নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে না। এমনকি ‘হলি ল্যান্ড ফাইভ’ নিয়ে লেখা র্যাপ গানও সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত মতপ্রকাশের অধিকার।
‘মুসলিমবিরোধী প্রচারণা’
মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় ইসলামবিরোধী বক্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। সিএআইআর (আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল) এই প্রচারণাকে ‘বর্ণবাদী ও ইসলামফোবিক’ বলে নিন্দা করেছে।
মামদানি নিজেও এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইসলামবিদ্বেষ এখন আমেরিকার রাজনীতিতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মুসলমানরা এখানে নাগরিক হিসেবে নিজেদের জায়গা দাবি করলে সেটাকেই অনেকে সমস্যা মনে করে।’
১৪তম সংশোধনী ব্যবহার করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা
নিউইয়র্ক ইয়াং রিপাবলিকান ক্লাব মামদানিকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দিতে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি—মামদানি ‘রাষ্ট্রের শত্রুদের সহায়তা’ দিয়েছেন এবং ‘প্রো-হামাস’ অবস্থান নিয়েছেন।
তবে সংবিধানের এই ধারাটি কেবল ‘বিদ্রোহ বা যুদ্ধকালীন শত্রুদের সহায়তা’র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অভিবাসননীতি বা রাজনৈতিক মতবিরোধ এতে পড়ে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে সম্ভাবনা প্রায় শূন্য
আইন অধ্যাপক ক্যাসান্দ্রা রবার্টসন বলেন, মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বরং এই উদ্যোগের ফলে অন্য অভিবাসীরা সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পেতে পারেন। তিনি আরও বলেন, এটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক