জি-২০ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা ট্রাম্পের
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের ওপর ‘নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা’ ঘটছে—যা আন্তর্জাতিকভাবে অবিশ্বাস্য ও খণ্ডিত অভিযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় জি-২০ আয়োজন সম্পূর্ণ লজ্জাজনক বিষয়। আফ্রিকানারদের হত্যা ও তাদের জমি অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন চলতে থাকলে কোনো মার্কিন কর্মকর্তা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না। খবর বিবিসির।
দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকানার সম্প্রদায়—যারা মূলত ডাচ, ফরাসি ও জার্মান অভিবাসীদের বংশধর—‘নির্যাতনের শিকার’। তবে দেশটির কোনো রাজনৈতিক দল, এমনকি শ্বেতাঙ্গ বা আফ্রিকানারদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোও, দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘গণহত্যা’ হচ্ছে বলে কোনো দাবি করেনি।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, আফ্রিকানারদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের জমি ও খামার জোর করে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটি মানবাধিকারের ঘোরতর লঙ্ঘন।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০-এর সদস্য হওয়া উচিত নয় এবং তিনি নিজে না গিয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে পাঠাবেন। তবে সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্মকর্তাই এই সম্মেলনে যোগ দেবে না।
প্রতিবছর জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ঘুরে ঘুরে নির্ধারিত হয়। এই বছর আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, পরবর্তী বছর আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফ্রিকানারদেরকে কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায় হিসেবে চিত্রায়ণ ঐতিহাসিকভাবে ভুল। এছাড়া, এই গোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ বছরের শুরু থেকে ট্রাম্প একাধিকবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে দেশটি শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। মে মাসে ওয়াশিংটনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও তিনি এ অভিযোগ করেন।
তার প্রশাসন এরই মধ্যে আফ্রিকানারদের ‘শরণার্থী মর্যাদা’ দিয়েছে, যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে—দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ চলছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলছে, এই দাবি ‘অবিশ্বাস্য ও ভিত্তিহীন’ এবং দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকদের মধ্যে এ ধরনের শরণার্থী আবেদনও ‘খুবই সীমিত’।
ফেব্রুয়ারিতে দেশটির একটি আদালতও এই অভিযোগকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ বলে বাতিল করেছে।
জি-২০ গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে এশীয় অর্থনৈতিক সংকটের পর। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোটের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বর্তমানে জি-২০ সদস্য দেশগুলো বিশ্বের ৮৫ শতাংশেরও বেশি সম্পদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক