যে কারণে অস্থির স্বর্ণের বাজার
দুই দিন টানা দরপতনের পর বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টােবর) আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আবার বেড়েছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের আগে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থানের কারণে দামের এ উত্থান হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে স্পট গোল্ডের দাম বেড়ে প্রতি আউন্সে দাঁড়ায় ৪১৪৯.৩৯ ডলার, যা ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি। বুধবার (২২ অক্টোবর) এর দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্সে ৪১৬৫.৮০ ডলার। খবর রয়টার্সের।
সপ্তাহের শুরুতে সোমবার (২০ অক্টােবর) স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৩৮১.২১ ডলারে উঠেছিল, তবে পরদিন তা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন দেখে।
এ বছর স্বর্ণের বাজার অস্থির
এই বছর স্বর্ণের দাম প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অব্যাহত স্বর্ণ ক্রয় এই উত্থানের মূল কারণ।
জেনার মেটালসের সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেন, ‘যে মৌলিক কারণগুলো স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে, সেগুলো এখনও বিদ্যমান। দামের সাম্প্রতিক পতনের পর কিছু বিনিয়োগকারী সুযোগ নিচ্ছেন, পাশাপাশি নতুন ভূরাজনৈতিক উদ্বেগও আজকের উত্থানকে উস্কে দিয়েছে।’
ভূরাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর ইউক্রেন-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। রাশিয়ার তেল কোম্পানি লুকঅয়েল ও রোসনেফটকে লক্ষ্য করে এ নিষেধাজ্ঞা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নতুন রপ্তানি সীমাবদ্ধতা আরোপের পরিকল্পনা করছে, বিশেষত সফটওয়্যারভিত্তিক প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে।
মুদ্রাস্ফীতি তথ্যের দিকে নজর
বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন শুক্রবার (২৪ অক্টােবর) প্রকাশিতব্য মার্কিন ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) ডেটার জন্য, যা ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী বৈঠকের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সেপ্টেম্বরে মূল মুদ্রাস্ফীতি ৩.১ শতাংশে স্থিতিশীল ছিল।
বাজার ইতোমধ্যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ডিসেম্বরেও আরও একটি হার কমানোর প্রত্যাশা রয়েছে। কম সুদের হার সাধারণত স্বর্ণের মতো অ-সুদভিত্তিক সম্পদের জন্য ইতিবাচক।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস
জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের গড় দাম প্রতি আউন্সে ৫ হাজার ৫৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে। তাদের ধারণা অনুযায়ী, আগামী বছর প্রতি প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা গড়ে ৫৬৬ টন হবে।
অন্যদিকে, স্পট সিলভারের দাম বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪৯.২৫ ডলার, প্লাটিনামের দাম সামান্য বেড়ে ১৬২৩.৯৯ ডলার, আর প্যালাডিয়ামের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭০.৭১ ডলার প্রতি আউন্স।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক